সিগারেট থেকে ঢাকা মেডিকেলের চারতলায় অগ্নিকাণ্ড!
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুরাতন ভবনের চতুর্থতলায় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) অবস্থিত। আইসিইউ ইউনিটের পাশ ঘেঁষে চিকিৎসকদের একটি কক্ষ। সেখানে বিশ্রাম করার জন্য পাঁচটি বিছানা আছে। কক্ষের পাশের একটি স্থানে পড়েছিল শত শত সিগারেটের শেষাংশ, বিস্কুটের প্যাকেট, কাপড় ও পানির খালি বোতল।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের সেই অংশেই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, হাসপাতালের বৈদ্যুতিককাজে নিয়োজিত কর্মী, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ওই নোংরা স্থানে ফেলা জ্বলন্ত সিগারেট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। একজন বলে উঠলেন, ‘সিগারেট খেয়ে ফেলার পর আগুন ধরছে।’
পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠলেন, ‘স্যার, সিগারেট খেয়ে বের হলেন, আর আগুন ধরে গেল।’ পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁরা আর নামপ্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।
সেখানে থাকা তৃতীয় আরেকজন বলেন, ‘হাজার হাজার সিগারেটের শেষাংশ সেখানে পড়েছিল। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরেও সেখানে অনেকগুলো মুথা পড়ে আছে।’
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বোধ হয়, সিগারেট খাওয়ার পর ওই স্থানে ফেলা হয়েছিল। জায়গাটা খুবই নোংরা আর আগুন ধরার উপকরণ ছিল বলে আগুন ধরে গেছে। ওই স্থানে অনেকেই সিগারেট খান। স্থানটা এমন যে, সেখানে বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে আগুন লাগার সুযোগ নেই।’
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক ছালেহ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে। হয়তো উপর থেকে কেউ সিগারেট খেয়ে নিচে ফেলেছে।’
ওই স্থানটা বদ্ধ, তার মানে উপর থেকে সিগারেট পড়ার কোনো সুযোগ নেই- এ কথার জবাবে ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘তাহলে চিকিৎসকদের ওই কক্ষ থেকে সিগারেট ফেলা হতে পারে। অবশ্য ওই কক্ষে সাধারণ কর্মচারীরাও প্রবেশ করে।’
হাসপাতালের সাবডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (এসডিই) বখতিয়ার আহমদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, 'এখানে বিদ্যুতিক ত্রুটি থেকে আগুন লাগার কোনো সুযোগ নেই। সিগারেট ফেলার পর আগুন লাগছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এই আগুনে এক চিলতেও ক্ষতি হয়নি।'
চতুর্থতলার আইসিইউ ইউনিটের নার্স মৌসুমী আক্তার তুলি বলেন, 'আগুন লাগার পর চারদিকে ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গিয়েছিল। আমাদের ইউনিটের ভেতরেও ধোঁয়া আসে।'
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় অব্যবহৃত জিনিসপত্র পড়ে থাকতে পারে। সেগুলো কীভাবে দ্রুত পরিষ্কার করা যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করব।’
এর আগে দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের চারতলার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন জানান, পরে তিনটি ইউনিট একযোগে কাজ করে ২টা ৫ মিনিটে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনার তদন্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে।