সুন্দরবনে পথ হারানো ১০ পর্যটককে উদ্ধার করল প্রশাসন ও বনবিভাগ
শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে হারিয়ে যাওয়া ১০ পর্যটককে উদ্ধার করেছে প্রশাসন ও বনবিভাগের সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় তাদের সুন্দরবনের গভীরে একটি খালের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ বন টহলফাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, গতকাল শুক্রবার যশোর থেকে আসা ওই ১০ পর্যটক সুন্দরবন দেখার উদ্দেশ্যে ট্রলারে চেপে বেলা ১২টায় মুন্সিগঞ্জ ঘুরে কলাগাছিয়া ফরেস্ট স্টেশন হয়ে শ্যামনগরে ফিরছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে তারা সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে পথ হারিয়ে ফেলেন। ফেরার রাস্তা খুঁজতে গিয়ে এক পর্যায়ে তাদের ট্রলারের জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। তারা কোথায় আছেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছিলেন না।
এসময় তারা শ্যামনগরের ইউএনও মো. আক্তার হোসেনকে বিষয়টি জানালে তিনি ছয়টি উদ্ধারকারী দল পাঠান। এক পর্যায়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘ওই ১০ পর্যটক কোথায় আছেন তা না বলতে পারলেও তারা গুগল ম্যাপে তাদের লোকেশন আমার কাছে পাঠান। সেখানে দেখা যায় গাবুরা ইউনিয়নের ‘দৃষ্টিনন্দন’ নামের একটি জায়গার পাশে তারা আটকা পড়েছেন। এরপর ওই এলাকার ইউপি সদস্যেকে বিষয়টি জানানো হয়।’
ইউএনও আক্তার হোসেন আরও বলেন, ‘পর্যটকদের অবস্থান মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পর ছয়টি দল তাদেরকে উদ্ধারকাজে চুনা নদী থেকে ট্রলারযোগে রওনা দেয়। গুগল ম্যাপে লোকেশন পাওয়া গেলেও ওই এলাকার সঠিক ম্যাপ গুগলে ছিল না। এছাড়া অন্ধকারে সুন্দরবনের গভীরে ছোটবড় খাল পেরিয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত বিপদজনক ও কঠিন কাজ। প্রায় ছয় ঘণ্টা খোঁজাখুজি করার পর আমরা তাদেরকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই।’
বুড়িগোয়ালিনী ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর পর্যায়ক্রমে বনবিভাগের দুটি দল, ট্যুরিস্ট পুলিশ, গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের একটি দল, বোট মালিক সমিতির একটি দল এবং ইউএনওকে বহনকারী একটি দল সুন্দরবনের গহীনে রওনা দেয়। কয়েকঘণ্টা তন্নতন্ন করে খোঁজার পর ওই পর্যটকদেরকে একটি খালের পাশে পাওয়া গেলে আমরা তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
এএসআই রবিউল আরও জানান, উদ্ধার হওয়া ওই পর্যটকদের সবার বাড়ি যশোরের পুটখালী, বারিপোতা ও শার্শাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
যশোর থেকে আসা ওই পর্যটকরা জানান, হারিয়ে যাবার পর তারা অনেক ভয় পাচ্ছিলেন। জায়গাটি বিপদসংকুল এবং সেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ঘোরাফেরা করে। এছাড়া বনদস্যুদের আতংক তো আছেই। তবে সব ভয় উপেক্ষা করে প্রশাসন ও বনবিভাগ যা করেছে তা সত্যিই অকল্পনীয়।
উদ্ধার হওয়া পর্যটকরা ইতোমধ্যে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।