সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে যা বলেছেন প্রধান বিচারপতি
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের বিষয়টি সমাধান করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার পর আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকেদের একথা জানান।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটা প্রাইভেট বডি। তাই এটা আইনজীবী সমিতির বিষয়। এখানে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে বসে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করেন। সবাই মিলে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করেন।’
এবারের নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে হলে দুপক্ষকেই সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। একপক্ষ ব্যালট ছিড়ে নিয়ে যাবে, অপর পক্ষ বাধা দেবে—তাহলে পরিবেশ ঠিক থাকবে কী করে? কাকে দোষ দেবেন? বিএনপি তো প্রথম থেকেই নির্বাচন করতে চাচ্ছিল না। আগের দিন রাতে তারা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে।’
এদিকে গতকাল বুধবার নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় মর্মাহত বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে নজিরবিহীন ঘটনা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির আপিল বিভাগে তুলে ধরে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী নেতারা। আজ সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে গতকাল নজিরবিহীন ঘটেছে, যা চলমান। আজও আমাদের কক্ষে তালা লাগানো আছে, অনেকের কক্ষের চারপাশে পুলিশ দেওয়া হয়েছে। এই অঙ্গনে এটা কি অনুমোদিত? তারা সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্যাতন করেছে। আমরা সুরক্ষা চাইছি।’
এরপর বিএনপি প্যানেল থেকে এবারের নির্বাচনে সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির আদালতে বলেন, ‘আপনারা দেশের বিচার বিভাগের অভিভাবক। তাই আমাদের প্রত্যেকের ব্যথা, কষ্ট অভিভাবক হিসেবে অবহিত করা উচিত। সমিতির নির্বাচন হয় সব সময় উৎসবমুখর। তবে এবার কী হলো? আজও আমি কক্ষে ঢুকতে পারিনি। বাইরে থেকে তালা লাগানো। কক্ষের সামনে পুলিশ রয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অনেক আইনজীবী ও সাংবাদিককে আহত করা হয়েছে। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ও সভাপতি প্রার্থীসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় আরেকটি মামলা করেছে সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দিয়ে। সেখানে সমিতির বর্তমান কমিটির ছয়জন সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।’
একপর্যায়ে এই নির্বাচনের সভাপতি পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘নজিরবিহীন ঘটনা। ভোটকেন্দ্রে ৩০০ থেকে ৪০০ পুলিশ ঢুকে ধাক্কা দিতে থাকে। সবাই পড়ে যাচ্ছিল আর পুলিশ পা দিয়ে পাড়িয়েছে। আমার পায়ে ব্যথা। আমি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছি না। অনেক আইনজীবী ও সাংবাদিককে আহত করা হয়েছে।’
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ১১টার সময় তাঁর খাস কামরায় এ বিষয়ে কথা বলতে যেতে বলেন। সে অনুযায়ী বিএনপির এই আইনজীবী নেতারা ১১ টায় প্রধান বিচারপতির কক্ষে থাকা আপিল বিভাগের সব বিচারপতিদের উপস্থিতিতে কথা বলেন। সেখানে গতকালের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।