হিলি স্থলবন্দরে চালের বাজারে অস্থিরতা
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। স্থলবন্দর মোকামে কয়েকদিনের ব্যবধানে আমদানি করা চালের কেজিপ্রতি অন্তত ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আবার দেশি সব ধরনের সরু চালের কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়েছে। রমজান শুরুর আগেই চালের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় কিছু অসাধু মিলমালিক ও আমদানিকারক তাদের নিজস্ব গুদামে চাল মজুদ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এজন্য পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে দেশি মোটা চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার গত বছর চাল আমদানির উপর বিদ্যমান ৬২.৫০ শতাংশ ডিউটি (ট্যাক্স) কমিয়ে ২৫ শতাংশ ঘোষণা দেন। এরপর আমদানিকারকরা ভারত থেকে নন-বাসমতি চাল আমদানি করেন। এই সুবিধায় সর্বশেষ তারা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাল আমদানি করেছেন। কিন্তু সরকার চালের ডিউটি পুনরায় ৬২.৫০ শতাংশ আরোপ করায় মার্চ মাস থেকে আমদানিকারকরা লোকসানের ভয়ে দেশে চাল আমদানি বন্ধ রাখেন। ডিউটি বেশির কারণে কেউ চাল আমদানি করছেন না।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, বর্তমান চালের ডিউটি দিয়ে এবং ৩৫০ ডলারে ভারত থেকে চাল আমদানি করলে প্রতিকেজি ৫৪-৫৫ টাকা পড়ছে। আর যদি ২৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে আমদানি হয় তাহলে পড়বে ৪৪-৪৫ টাকা। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, রমজানে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আবারও ডিউটি কমিয়ে আমদানির অনুমতি দেওয়া হোক।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আমদানিকারক ও খুচরা চাল ব্যবসায়ী জানান, ভারত থেকে আমদানি করা জয়ন্তীভোগসহ কয়েকটি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল গেল চার-পাঁচ দিন আগে বিক্রি হয় ২৫ কেজির বস্তা এক হাজার ৫৫০ টাকায়। সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আগের আমদানি করা চাল বাজারে না ছেড়ে বন্দরে তাদের নিজস্ব গুদামে মজুদ করেন। বর্তমানে ভারত থেকে চাল আমদানি না হওয়ায় ওই আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে হিলিসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে চাল ছাড়তে শুরু করেছেন। ফলে দামের প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা চালের মোকামে।
বাংলাহিলি বাজারের চাল ব্যবসায়ী পলাশ কুমার বসাক জানান, দেশি সব ধরনের সরু চাল কেজিপ্রতি ছয় থেকে সাত টাকা বেড়েছে। আগে এই চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকায়। তবে মোটা চালের দাম না বাড়লেও ৪২ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় আমদানি করা মিনিকেট চাল (২৫ কেজির বস্তা) কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা বেশিতে কেউ কেউ বিক্রি করছে।
আরেক চাল ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন জানান, ভারত থেকে চাল আমদানির সময় অটো চালমিলের মালিকরা বাজারে চাল ছাড়েনি। যখন দেখল চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে, তখন থেকে তারা গুদামে মজুদ করা শুরু করে। এখন তারা সরু চাল বেশি দামে বিক্রি করতে শুরু করেছে। বাজারে ওএমএস চালু থাকলেও চালের দাম বাড়তির দিকে। সব বিপরীত দিকে চলছে।
চাল কিনতে আসা নূর হোসেন ও জলি বেগম জানান, প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়তেই আছে। ৪০ টাকার মোটা চাল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায় এবং ৫৬ টাকার সরু চাল ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত রমজানের আগেই বাজার মনিটরিং করা।
ভ্যানচালক আমিরুল জানান, আগামীকাল থেকে রমজান শুরু হবে। ব্যবসায়ীরা তাদের খেয়াল খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে। সব চাপ দেখি আমাদের মতো গরিব মানুষের উপর।
বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক জানান, গত বছরের ২৪ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এক হাজার ১৪২টি ভারতীয় ট্রাকে প্রায় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।
সম্প্রতি দিনাজপুর জেলা প্রশাসন চালসহ যেকোনো ভোগ্যপণ্য যাতে কেউ মজুদ করতে না পারে, সেজন্য মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও তার বাস্তব চিত্র হিলি স্থলবন্দরে দেখা যায়নি। ফলে আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা।