নাসিরনগরের ঘটনায় আরো তিনজন গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার তাঁদের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মো. সাদ্দাম (২৮), মো. তবারক হোসেন (৩৫) ও আহম্মদ আলী (৪৫)।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু জাফর বলেন, হামলার সময় ধারণ করা ভিডিওচিত্র দেখেই ওই তিনজনকে শনাক্ত করার পর গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে নাসিরনগর হামলার ঘটনায় ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের বাসিন্দা রসরাজ দাসের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবাঘরের ছবি সম্পাদনা করে পোস্ট করা হয়। এ নিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশে দেয়।
এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পরের দিন ২৯ অক্টোবর দিনভর নাসিরনগর সদর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরের দিন ৩০ অক্টোবর উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ চলাকালে সদরের একাধিক মন্দির ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
এ ঘটনার পর ৪ নভেম্বর উপজেলায় হিন্দুদের পাঁচটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ৫ নভেম্বর নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেবের গোয়ালঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর ১৬ নভেম্বর তাঁর বাড়ির আঙিনায় রাখা পাটখড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
নাসিরনগরে মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেন ও নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়। সহিংসতার ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় তিন নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তাঁরা হলেন নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, চাপড়তলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক আবুল হাশেম। এ ছাড়া গত ২৭ ডিসেম্বর নাসিরনগরের হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর গত ৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ আলীকে তাঁর গ্রামের বাড়ি চাপরতলা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁকে দুদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
নাসিরনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইশতিয়াক আহমেদ জানান, গত বছরের ৩০ অক্টোবর গৌর মন্দিরে হামলায় ভাঙচুরের মামলায় সুরুজ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পর্যায়ক্রমে তাঁকে বাকি মামলাগুলোতেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ আলীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকার অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার দিন নাসিরনগরে হওয়া একটি সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন সুরুজ আলী। তাঁর এ বক্তব্যের পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে; হামলা-ভাঙচুর শুরু হয়। ঘটনার পর পরই সুরুজ আলী গা-ঢাকা দেন।
এদিকে গত ২৮ নভেম্বর জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে রসরাজের ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে ধর্ম অবমাননাকর সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়নি বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফরেনসিক বিভাগ। গত ১৬ জানুয়ারি রসরাজ দাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
হিন্দুদের ঘরবাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় আটটি মামলা করা হয়।