ফরহাদ মজহার কীভাবে গিয়েছেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কবি ও লেখক ফরহাদ মজহার ‘নিখোঁজ’ হওয়ার দিন প্রতি ঘণ্টায় তাঁর খবর রাখা হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ওই সময় তাঁর মোবাইল নম্বরটি ট্র্যাক করা হচ্ছিল।
আজ বুধবার দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গী মডেল থানার নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
ফরহাদ মজহারের অপহরণ বা নিখোঁজের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমরা এগুলো সব খতিয়ে দেখেছি, কীভাবে গিয়েছেন, কী নিয়ে তিনি বের হয়েছেন, কয়টার সময় বের হয়েছেন, প্রতি ঘণ্টার খবর আমরা রেখেছিলাম। তাঁর মোবাইলকে ট্র্যাক করতে করতে এবং দুপুরে তিনি এক হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেছেন এবং বাসে উঠে গিয়েছিলেন সেই সময় তাঁকে আমাদের পুলিশ বাহিনী আইডেন্টিফাই করেছে এবং তাঁকে ডিটেক্ট করে আমরা নিয়ে আসছিলাম কাস্টডিতে। কাস্টডিতে আনার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর জবানবন্দি নেওয়া। আমরা তাঁর জবানবন্দি নিয়েছি, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন। এবং সেই অনুযায়ী আমরা একটা মামলাও আমরা করেছি। একটা মামলা করেছি, মানে মামলা হয়েছে আর কি। মামলাটার তদন্ত রিপোর্ট আমরা খুব শিগগিরই প্রকাশ করব।’
এ সময় আরেক প্রশ্নের জবাবে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে কারা দায়ী সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, মালিকসহ যাদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের ওপর বয়লারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল তারা সেটি ঠিকমতো করেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত সোমবার বিকেলে ফরহাদ মজহারের রাজধানীর শ্যামলী রিং রোডের ১ নম্বর বাড়িতে তাঁর বন্ধু গৌতম দাস সাংবাদিকদের জানান, ভোর ৫টার দিকে বাসার সামনে থেকে কে বা কারা ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোন থেকে স্ত্রী ফরিদা আখতারের কাছে টেলিফোন আসে। ফোনে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনটি কেটে দেন। এরপর বিষয়টি আদাবর থানার পুলিশকে জানানো হয় বলে জানান গৌতম।
পরে সেদিন দুপুরে ফরহাদ মজহারের মোবাইল নেটওয়ার্ক খুলনার শিববাড়ী এলাকায় বলে নিশ্চিত হয় র্যাব-৬। তাঁকে উদ্ধারে সন্ধ্যা ৬টার দিকে র্যাব ৬-এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে শিববাড়ী এলাকায় কেডিএ অ্যাপ্রোচ রোড, ইব্রাহিম মিয়া রোড এলাকায় বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু শুরু হয়। এ সময় আশপাশে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনও তল্লাশি করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের নোয়াপাড়া এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করা হয়।
রাত ২টার দিকে ঢাকার আদাবর থানার পুলিশ ও ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের একটি দল ফরহাদ মজহারকে নিয়ে মাইক্রোবাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে আদাবর থানায় নিয়ে আসা হয় মজহারকে। এরপর বেলা পৌনে ৩টার দিকে তাঁকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে হাজির করে আদাবর থানার পুলিশ। সেখানে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের আদালতে ঘটনার বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি দেন। একই সঙ্গে আদালতে নিজ জিম্মায় যাওয়ার জন্য আবেদন করেন ফরহাদ মজহার। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফরহাদ মজহারকে নিজ জিম্মায় যাওয়ার জন্য অনুমতি দেন আদালত। পরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।