মাদক পাচারের নিরাপদ রুট বাংলাদেশ!
দক্ষিণ এশিয়া বা এশিয়ার বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাদক প্রবেশের জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশ! বিশেষত এ অঞ্চলের বন্দরগুলোর দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণেই চোরাচালানের রুট হিসেবে এই পথ পাচারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এশিয়ার সবচেয়ে বড় কোকেনের চালান ধরা পড়েছে এ মাসের শুরুতে। বাংলাদেশের একটি বন্দর থেকে এই বিপুল পরিমাণ মাদকের চালানটি ধরা পড়ে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশকে পথ হিসেবে ব্যবহার করে এই কোকেন ভারতে যাচ্ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মাদক চোরাচালানের হার বেশ বেড়ে গেছে। তবে এখনো নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না, বাংলাদেশে ধরা পড়া ওই কোকেন ভারতেই যাচ্ছিল কি না। এমনও হতে পারে যে, এই পথ ব্যবহার করে এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে ঢুকছিল এসব কোকেন।
বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ভারতে পাচার করার পথে চট্টগ্রামে এসব কোকেন ধরা পড়ে।’ তিনি বলেন, এই চালানের কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, চালানটি ভারতের যেকোনো বন্দরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।
এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে মাদক চোরাচালান কিছুদিন ধরে বেশ বেড়েছে। গত তিন মাসে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা থেকে আসা বিপুল পরিমাণের কোকেন ভারতের বাজারে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া একই সময়ে কাঠমান্ডু থেকেও প্রচুর পরিমাণে কোকেন জব্দ করা হয়েছে। তবে জাতিসংঘ মনে করছে, দক্ষিণ এশিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে আরো প্রচুর কোকেন পাচার হচ্ছে, যা ধরাই পড়ছে না।
গার্ডিয়ান বলছে, সম্ভবত লাতিন আমেরিকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে নিজেদের চোরাচালানের রুট আড়াল করতেই দক্ষিণ এশিয়াকে পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করছে। এ অঞ্চলের বন্দরগুলোর দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই এ কাজ করছে তারা। এ ছাড়া মেক্সিকোর সিনালোয়া অথবা প্যাসিফিক কার্টেলের মতো চক্রগুলো এশিয়াকে মাদকের একটি বড় বাজার হিসেবে দেখছে।
বাংলাদেশে ধরা পড়া বিপুল পরিমাণ কোকেনের প্রসঙ্গ টেনে এ ঘটনাকে সতর্ক হওয়ার সুযোগ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিভাগের কর্মকর্তা ক্রিস্টিনা আলবার্টিন। বিভিন্ন কার্গোতে আসা মাদক শনাক্ত করতে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিভাগের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সে সঙ্গে মাদক শনাক্তকরণ যন্ত্রও তাঁদের দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে এসব যন্ত্র দিয়ে আগে কখনো কোকেন পরীক্ষা করা হয়নি। তাই কোকেন শনাক্তের যন্ত্রও এখন দেওয়া হবে তাঁদের।
বেশ কিছু মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ অঞ্চলের মাদক চোরাচালানের বিষয়ে কঠোর দৃষ্টি রাখছে। এসবের মধ্যে কোকেনের এত বড় চালান ধরা পড়ায় আশ্চর্য হয়েছে সংস্থাগুলো।
যদিও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার তুলানায় এ অঞ্চলে কোকেনের ব্যবহার কিছুটা কম। তবু এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির শহরগুলোতে নব্য ধনী মানুষের বিভিন্ন পার্টিতে কোকেনের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিভাগের মেক্সিকোর প্রতিনিধি অ্যান্টোনিও মাজিতেলি বলেন, লাতিন আমেরিকার মাদক ব্যবসায়ী সংস্থাগুলো এখন অনেক শক্তিশালী। এরা এখন নতুন বাজারের সন্ধানে আছে। বিশেষ করে কোকেন ও মেথামফেটামিন ধরনের মাদক বিক্রির নতুন বাজার খুঁজছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে এশিয়া হচ্ছে এখন তাঁদের নতুন বাজার।
এদিকে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এর আগে গত মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশের শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানকার ব্যস্ততম বন্দর থেকে ১০৭টি নীল রঙের সূর্যমুখী তেলের ব্যারেল জব্দ করেন।
কর্মকর্তারা জানান, এই তেলের মধ্যে ৬০ থেকে ১০০ কেজি কোকেন মেশানো ছিল। এসব কোকেন মেশোনো তেল এসেছিল বলিভিয়া থেকে। দেশটি সূর্যমুখীর তেল ও কোকেন তৈরিতে শীর্ষে আছে।
বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সাউথ ফ্রেইট লজিস্টিক নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই তেল আমদানি করছিল। তবে এই প্রতিষ্ঠানের যে ফোন নম্বর দেওয়া ছিল, সেটি অকার্যকর হয়ে আছে। আর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।