‘জঙ্গি’ সাইফুলের বাবাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে : এসপি
রাজধানীর পান্থপথে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত ‘জঙ্গি’ সাইফুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের মোল্লাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন খুলনা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) নিজাম উদ্দিন মোল্লা।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নওকাটি গ্রাম থেকে আবুল খায়েরকে আটক করা হয়েছিল। এরপর দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসপি নিজাম।
নিজাম উদ্দিন মোল্লা জানান, নিহত জঙ্গি সাইফুলের সম্পর্কে তথ্য জানতে তাঁর বাবা আবুল খায়েরকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর এসপি জানিয়েছিলেন সাইফুলের বাবা সাহস ইউনিয়ন জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ ও নওকাটি জামে মসজিদের ইমাম।
আজ সকালে পুলিশ জানিয়েছিল, লাশ শনাক্ত করার জন্য আবুল খায়েরকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, পুলিশ ছেড়ে দেওয়ার কথা জানালেও আবুল খায়েরের পরিবারের সদস্যদের দাবি, পুলিশ তাকে আটকে রেখেছে। সর্বশেষ বিকেল ৪টায়ও আবুল খায়ের ফেরত আসেননি। তাঁর ভাই আবদুর রউফ মোল্লা বলেন, ‘উনি এখনো থানায় আটকা। ছাড়া পেলে তো বাড়িতে আসতেন।’
সর্বশেষ বিকেল সাড়ে ৩টায় ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিলুর রহমান বলেন, ‘থানা থেকে ছাড়া পেয়ে আবুল খায়ের সাহেব হয়তো কোনো স্বজনদের বাড়ি বেড়াতে গেছে। থানা থেকে বেরিয়ে তিনি কোথায় গেছেন সে খবর পুলিশ জানে না।’
এর আগে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অপারেশন অগাস্ট বাইট’ অভিযানে নিহত ‘জঙ্গি’ সাইফুল ইসলাম চাকরির কথা বলে ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে পান্থপথে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মনিরুল।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান জানান, সাইফুল বরিশাল বিএম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ৭ আগস্ট চাকরির কথা বলে বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। ঢাকায় আসার পর সংগঠন থেকে শোক দিবসে আত্মঘাতী হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে।
মনিরুল ইসলামের ভাষ্য, গোয়েন্দা তথ্য ছিল, শোক দিবসের মিছিলে আত্মঘাতী হামলা চালানো হবে। এ কারণে জঙ্গিরা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরকে টার্গেট করেছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই ৩২ নম্বরের আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। যেহেতু ৩২ নম্বর, পান্থপথ, তিন রাস্তার মোড়—তিন দিক থেকেই মিছিল আসতে পারে, তাই জঙ্গিরা এর আশপাশে অবস্থান করবে বলে পুলিশ খবর পায়। সেই খবরের ভিত্তিতেই সোর্সের মাধ্যমে সাইফুলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
মনিরুল জানান, মঙ্গলবার রাতে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল আবাসিকের প্রত্যেকটি কক্ষ তল্লাশি করা হয়। এ সময় ৩০১ নম্বর কক্ষে তাঁর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। নিহত জঙ্গি সাইফুল ট্রাভেল ব্যাগে করে তিনটি বোমা নিয়ে আসে, যার একটি বিস্ফোরণের ফলে রুমের দরজা, জানালাসহ ভবনের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। আর একটি বোমা বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অপর একটি বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই ‘অপারেশন অগাস্ট বাইট’ শেষ করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, সাইফুল ইসলাম নব্য জেএমবির সদস্য। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জঙ্গি অবস্থান করছে সন্দেহে মঙ্গলবার ভোররাত থেকে পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালের পাশে অবস্থিত হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হোটেলটি ঘিরে সকাল থেকে অভিযান শুরু করে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট।