‘পানিবন্দি মানুষের জানমাল রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/06/18/photo-1529327125.jpg)
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, বন্যা দুর্গত মৌলভীবাজারসহ বৃহত্তর সিলেটের যে সব জায়গায় পানিবন্দি মানুষ কষ্টে আছে তাদের জানমাল রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। যত দিন পর্যন্ত বন্যার্তদের দুঃখ-দুর্দশা ও কষ্ট লাঘব হবে না, তত দিন পর্যন্ত এ ত্রাণ দেওয়া অব্যাহত থাকবে। আমাদের ত্রাণের কোনো অভাব নাই। এলাকার মানুষের যে চাহিদা তার চেয়ে বেশি ত্রাণ দিতে সক্ষম হব।
আজ সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার সার্কিট হাউসে প্রশাসনসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
পরে ত্রাণমন্ত্রী বন্যা দুর্গত এলাকা শহরের বড়হাট ও রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকা পরির্দশন করেন এবং দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে মনু নদীর বারইকোনাতে প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পৌর এলাকা এবং সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ও কনকপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের বড়হাট এলাকায় আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় জনগণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
গত শনিবার দিবাগত রাতে মনু নদীর বারইকোনাতে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙনের ফলে অনেকে নিজ ঘরে আটকা পড়েন। পানি ঢুকে ঘরের মূল্যবান মালামাল ডুবে নষ্ট হয়েছে। অনেকেই বাড়ির দোতালায় আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে আনা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে শহরতলীর মোস্তফাপুর এলাকায় পানির তোড়ে সোবহান নামের একজন মারা গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে আটজন মারা গেছে।
যারা বন্যা কবলিত এলাকার দোতলা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটে পড়েছে। আবার আটকে পড়া অনেককে আত্মীয়স্বজন উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
আজ সোমবার দুপুরে শহরের বড়হাট এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে গেলে দেখা যায়, বাঁধের ওপর ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার পলিথিন দিয়ে তৈরি করা ছাউনির মধ্যে থাকছে। আবার অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া শেলী বেগম, জেবিন আক্তার, বাদশা মিয়া ও রহমত আলী জানান, ঈদের আগের রাত থেকে তাদের ঘুম নেই কখন বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় এই আতঙ্কে। বারইকোনাতে বাঁধ ভাঙার পর আসবাবপত্র ফেলে কোনো রকম নিজের প্রাণ নিয়ে তারা বড়হাটের বাঁধে আশ্রয় নেয়।
এদিকে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায় কুশিয়ার নদীর বাঁধ ভেঙে হামকোনা, ব্রাহ্মণগাঁও ও দাউদপুর এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।
গত কয়েক দিনের অব্যাহত বন্যায় মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ২৫টি ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে বন্যা দেখা দেয়।
মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাটে মনু নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুরে মনু নদীর পানি ও কমলগেঞ্জ ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে জানান, জেলার একটি পৌরসভা ও চারটি উপজেলায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৬০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১০ লাখ টাকা বন্যা আক্রান্ত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা, উদ্ধারকাজ ও অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সার্বিক তদারকিতে রয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও মৌলভীবাজার পৌরসভা। জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে এ পর্যন্ত আটজন মারা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, আজ সকাল ৫টায় মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাট পয়েন্টে ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ও কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।