একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা : যুক্তিতর্ক শেষ হবে চলতি সপ্তাহে

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর একুশে আগস্ট মামলার তারিখ ধার্য রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক সমাপ্ত হবে বলে আশা করছি। এরপর আসামিপক্ষ আইনি পয়েন্টে সামগ্রিকভাবে বক্তব্য পেশের সুযোগ পাবে।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যাক্টসের আলোকে রাষ্ট্রপক্ষ এর আগে টানা ২৫ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক পেশ করেছে। এরপর আসামিপক্ষ টানা ৮৯ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক পেশ করেছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ টানা তিন কার্যদিবস আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক পেশ করেছে। আশা করছি, পরবর্তী ধার্য তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করতে পারবে।’ তিনি বলেন, এর আগে আসামিপক্ষ ফ্যাক্টস পাশাপাশি আইনি পয়েন্টেও যুক্তিতর্ক পেশ করেছে। রাষ্ট্রপক্ষে পেশ করা আইনি পয়েন্টের আলোকে আসামিপক্ষও আইনি পয়েন্টে জবাব দেওয়ার সুযোগ পাবে।
প্রধান কৌঁসুলি বলেন, ‘মামলায় আসামিপক্ষ আইন অনুযায়ী সব সুবিধা ভোগ করেছেন। দীর্ঘ ১২ বছর মামলার বিচারকাজ আমরা পরিচালনা করেছি। এখন মামলার বিচার একেবারেই শেষ পর্যায়ে।’ মামলা বিচারিক আদালতে অচিরেই রায় ও নিষ্পত্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সৈয়দ রেজাউর রহমান।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র, অপরাধ সংগঠন, অপরাধের আলামত ধ্বংস ও অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে বলে দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ওই ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে।
১১৭ কার্যদিবস শেষে মামলাটি এই পর্যায়ে এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়েছে ২৮ কার্যদিবস আর আসামিপক্ষ নিয়েছে ৮৯ কার্যদিবস।
২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।