তিন সচিবসহ ২২ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের
নির্বাচন কমিশন সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিবসহ প্রশাসনের ২২ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান করতে সব দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে তারা। বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিটি পৌঁছে দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বরাবর পাঠানো চিঠিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধানমন্ত্রী এই বলে সবাইকে আশ্বস্থ করেছিলেন যে, অবশ্যই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নির্বাচনী পরিবেশ ও নির্বাচনের মাঠের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
\
তফসিল ঘোষণার আগে সরকারি দলের সমর্থক কর্মকর্তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্তরে যেভাবে প্রশাসন সাজানো হয়েছিলো তা এখনো বহাল রয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিহীন। এমনকি, আপনিও ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণাকালে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে সকল দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। অথচ ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ব্যতীত কিছুতেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও সরকার কর্তৃক সাজানো প্রশাসনে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। প্রশাসনে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারের সাজানো প্রশাসন বহাল থাকায় একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশবাসী লক্ষ্য করছে যে, তফসিল ঘোষণার পর ১০ থেকে ১২ দিন সময় অতিবাহিত হলেও আপনাদের এ সকল প্রতিশ্রুতির দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। উপরন্তু সরকারের সাজানো প্রশাসনে অতি দলবাজ ও চিহ্নিত বিতর্কিত কর্মকর্তারা নির্বাচনী মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ কমিশন এ সকল বিতর্কিত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
এ অবস্থায় জনপ্রশাসনের নিম্নলিখিত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহারপূর্বক নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।
১. নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ, ২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ, ৩. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, ৪. চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, ৫. খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, ৬. ভোলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মাসুদ আলম, ৭. চট্টগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসাইন, ৮. কুমিল্লার ডিসি মো. আবুল ফজল মীর, ৯. ফেনীর ডিসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান, ১০. লক্ষ্মীপুরের ডিসি অঞ্জন চন্দ্র পাল, ১১. কিশোরগঞ্জের ডিসি মো. সরোয়ার মোরশেদ চৌধুরী, ১২. নরসিংদীর ডিসি সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, ১৩. টাঙ্গাইলের ডিসি মো. শহীদুল ইসলাম, ১৪. ঝিনাইদহের ডিসি সরোজ কুমার নাথ, ১৫. খুলনার ডিসি মোহাম্মদ হেলাল হোসাইন, ১৬. কুষ্টিয়ার ডিসি মো. আসলাম হোসাইন, ১৭. নড়াইলের ডিসি আঞ্জুমান আরা, ১৮. ময়মনসিংহের ডিসি শুভাস চন্দ্র, ১৯. জয়পুরহাটের ডিসি মোহাম্মদ জাকির হোসাইন, ২০. নওগাঁর ডিসি মো. মিজানুর রহমান, ২১. রাজশাহীর ডিসি এস এম আব্দুল কাদের ও ২২. সিলেটের ডিসি কাজী এমদাদুল হক।
চিঠির শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের অবশিষ্ট কর্মকর্তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের দাবি জানাব। এতদ্ব্যতীত অবিলম্বে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সচিবগণকে প্রত্যাহার/বদলির দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে মাঠ প্রশাসনের অন্যান্য জেলার ডিসি ও সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থল জেলার বাইরে বদলির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও পুনরায় জোর দাবি জানাচ্ছি।’