দলীয় প্রতীকে বিজয়ী হওয়ার আশা
জমে উঠেছে পঞ্চগড় পৌরসভার নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর পৌর নির্বাচনের প্রচারণা বেড়েছে। দলীয় প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণায় কেউ কেউ অখুশি হলেও সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থীরা প্রচারণার জন্য মাঠে নেমেছেন।
বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। জনপ্রিয়তা না থাকলেও দলীয় প্রতীকের জোরে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অনেক প্রার্থীই। এসব প্রার্থী স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে দলের হাইকমান্ড পর্যন্ত লবিং গ্রুপিং শুরু করেছেন। কেউ কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরেও প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিচ্ছেন।
নির্বাচনী মাঠ সাজাতে প্রার্থীরা এরই মধ্যে উঠোন বৈঠক, মতবিনিময় সভাসহ বিভিন্ন মসজিদ-মন্দিরে ও ভোটারদের দ্বারে যাতায়াত শুরু করেছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী, বিএনপি, জামায়াত ও জাসদের একক প্রার্থী চালাচ্ছেন তাদের প্রচারণা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও জাসদের প্রার্থীরা প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে আতঙ্ক, হতাশা আর শঙ্কার মধ্য দিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও বসে নেই। মামলা, হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় মাথায় নিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
পৌর নাগরিক ও ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজের ছবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও শুভেচ্ছা পোস্টারে পৌর এলাকা ভরিয়ে তুলেছেন।
অবশ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর অনেকেই এসব নামিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে শহরের চায়ের দোকানগুলোও এখন সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনের আলাপ আলোচনায়।
২২ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ১৯৮৫ সালের ১৫ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় পঞ্চগড় পৌরসভা। এ পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার, ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এ পৌরসভার বর্তমান মেয়র জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলাম চারবার মেয়র নির্বাচিত হন। এবারও তিনি বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এঁরা হলেন পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মির্জা সারোয়ার হোসেন, জেলা ওলামা লীগের উপদেষ্টা, জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পঞ্চগড় পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. সফিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা হুয়ামুন কবির উজ্জ্বল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া আনোয়ার ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন।
তবে গত শুক্রবার পঞ্চগড় সার্কিট হাউসে পঞ্চগড়-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র হিসেবে অ্যাডভোকেট সারোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। একটি অংশ এর বিরোধিতা করে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন সবার মতামতের ভিত্তিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মির্জা সারোয়ার হোসেনকে পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে নাম পাঠিয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি না এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
মেয়র পদে প্রভাবশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী জাকিয়া আনোয়ার জানান, দলের তৃণমূল নেতাদের মত উপেক্ষা করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একাই একজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রার্থীরা ভোটের কথা বললেও তিনি কারো কথাই শোনেননি।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও পৌর বিএনপির সভাপতি পঞ্চগড় পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, দলীয়ভাবে এবং দলের প্রতীকে নির্বাচন করলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। জনসাধারণের ক্ষমতাও হ্রাস পাবে।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না তা নিশ্চিত না হলেও জামায়াতে ইসলামীর পঞ্চগড়ের আমির সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল খালেক পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি মনোনয়নপত্রও কিনেছেন।
মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পঞ্চগড় জেলা জাসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বাবুল। এরই মধ্যে তিনি মনোনয়নপত্রও নিয়েছেন।
পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা নাজমুল হক প্রধান বিভিন্ন সভা-সমাবেশে পৌরসভার প্রার্থী হিসেবে আবদুল মজিদ বাবুলের নাম ঘোষণা করছেন।
জাতীয় পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) পৌর নির্বাচনে প্রার্থী দেবে কি না তা জানা যায়নি।
শুধু মেয়র পদে নয়, প্রধান দুই জোটের কাউন্সিলর পদের একাধিক প্রার্থী প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে অনেকেই মনোনয়নপত্রও কিনেছেন।
পৌরসভা নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত জানিয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার দেওয়ান মো. সারোয়ার জাহান জানান, মেয়র পদে দুটি এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪৭টি মনোনয়নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।