মীর কাসেম আলীর উত্থান

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী এই নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা, নির্যাতন ও আটকের অভিযোগ।
কীভাবে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে এলেন মীর কাসেম আলী? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলজীবনেই ইসলামী ছাত্রসংঘের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটির শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন মীর কাসেম আলী।
প্রসিকিউশনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র মীর কাসেম আলী মুক্তিযুদ্ধের আগেই ইসলামী ছাত্রসংঘ চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। একাত্তরের ৬ নভেম্বর লাভ করেন স্বাধীনতাবিরোধী ওই ছাত্রসংগঠনটির সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ সম্পাদকের পদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মীর কাসেম সশস্ত্র আলবদর বাহিনী গঠন করেন অভিযোগ করে প্রসিকিউশনের দাবি, চট্টগ্রামের সব মানবতাবিরোধী অপরাধের মূলে ছিলেন এই জামায়াত নেতা।
তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশ স্বাধীন হলে মীর কাসেম লন্ডন হয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। ততদিনে ইসলামী ছাত্রসংঘ পরিবর্তিত হয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরে রূপ নেয়, যার প্রথম সভাপতি হন মীর কাসেম আলী।
২০১২ সালের ১৭ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ওই দিনই দৈনিক নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন মীর কাসেম। সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরের বছর মে মাসে ১৪টি অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর মামলা স্থানান্তর করা হয় ট্রাইব্যুনাল-২-এ। রাষ্ট্রপক্ষে ২৪ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাক্ষ্য দেন। যুক্তিতর্ক ও রায়ের অপেক্ষা শেষে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-২ মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় দেন।
একই বছর ৩০ নভেম্বর এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মীর কাসেম। আজ সেই আপিলের রায় ঘোষণা করা হলো।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোর জসিমসহ ছয়জনকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমকে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফাঁসি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া আজ রঞ্জিত দাস, টুন্টু সেন হত্যার দায় থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।