খুলনায় কেন্দ্র দখল, গুলি, ব্যালট পেপার ছিনতাই

কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া এবং প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করার ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে খুলনার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। দখল প্রতিহত করতে গিয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে অনিয়ম ও জোর করে ভোট নেওয়ার অভিযোগে বিএনপি চার প্রার্থীসহ ছয়জন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
সকাল পৌনে ৮টায় ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের মাজিদিয়া আলীয়া মাদ্রাসার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রের বাইরে ভোটরেদের দীর্ঘ লাইন। পরিচয় দিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে মাদ্রাসা ভবনের দ্বিতীয় তলায় দেখা যায় পোলিং অফিসার একজন বহিরাগতকে সঙ্গে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। এ ঘটনার দৃশ্য ধারণ করতে গেলে তখন তারা প্রতীকের ওপর সিল মারা বাদ দিয়ে ব্যালটের পেছনে গোল সিল মারতে থাকেন। এই সময় সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলের পোলিং এজেন্ট ছিল না। দ্রুত ঘটনাটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সৈয়দ জসিম উদ্দিনকে জানানো হলে তিনি বলেন, ভোট গ্রহণ শুরু হলে এবং পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে গোল সিল মারা আইনের বিধান। তারপরও বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান।
এদিকে পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের সলুয়া রামনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরে সাড়ে ১২টায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ বেনজির আহমেদ বাচ্চু ২০-২৫ জন বহিরাগত নিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করেন। এই সময় তারা কেন্দ্রে উপস্থিত ভোটারদের এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। এতে ১০ জন আহত হয়। হঠাৎ এই ঘটনার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজে ব্যালটপেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারতে থাকে। এই সময় কেন্দ্রের তিনজন পুলিশ সদস্যকে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কেন্দ্র দখল এবং মারপিটের ঘটনার সময় কক্ষ ছেড়ে চলে যান পোলিং অফিসাররা। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে দখল ও মারপিট। পরে ঘটনাস্থলে বিজিবি সদস্যরা এসে পৌঁছালে ভোটকেন্দ্র ছেড়ে চলে যান তারা।
এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হাফিজ নুর নৌকা প্রতীকে জোর করে সিল দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রে মোট ভোটার এক হাজার ৮৯৪ । এর মধ্যে দখলের ঘটনার আগেই ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। কেন্দ্রে সাময়িক ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, আগত দুবৃত্তরা কিছু ব্যালট পেপারের মুড়ি ও ব্যালট পেপার নিয়ে গেছে। এ সময় তিনি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে নৌকা প্রতীকে সিল মারা ব্যালট পেপার তুলে ধরেন।
পাইকগাছার মালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিএনপির এজেন্ট বাবুল সরদারকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এই কেন্দ্রের পিজাইডিং অফিসার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, এজেন্ট আগে তাঁর কাছে অভিযোগ না করে আগেই রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছে। এই কেন্দ্রের ভোটারদের সবার সামনে সিল মারতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে ক্যামেরাসহ কেন্দ্রে প্রবেশ করলে চিত্র বদলে যায়।
দুপুরে আঘরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ব্যালটে সিল দেওয়ার জন্য নির্ধারিত বুথের মধ্যে এক সাথে তিনজন দাঁড়িয়ে সিল দিচ্ছেন। এ বিষয়ে পোলিং অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে নীরব থাকেন।
ডুমুরিয়ার আটলিয়া ইউনিয়নের বিএনপি সমার্থিত প্রার্থী শেখ মো. বদরুজ্জামান তসলিম এবং মাগুরঘোনা ইউনিয়নের বিএনপি সমার্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম স্থানীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনে ঘোষণা দেন। এ ছাড়া পাইকগাছা লস্কর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল করিম গাইনসহ ছয়জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন।
দুপুর ২টার দিকে খুলনা যোগীপোল ইউনিয়নের বিএনপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মীর কাইশেদ আলীর স্ত্রী ভোট দিতে গেলে বাধার সন্মুখীন হন। পরে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে পুলিশ ৫-৬ রাউন্ড গুলি বর্যণ করে। এতে মীর কাইশেদ আলী ও তাঁর স্ত্রীসহ সাতজন আহত হন।
এর আগে সকালে আইজগাগি ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রে ভোটারার আসার আগেই ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল দিয়ে বাক্স ভর্তি করা হয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী জুলফিকার আলী জুলু।
এ ছাড়া বটিয়াঘাটার সুরখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে গুলি বিনিময়ে আট জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।