ঢাবি ছাত্র সুজনের বাড়িতে মাতম
মাদারীপুরের সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ বিরাঙ্গল গ্রামে সুজন মৃধার (২৩) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনী সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেধাবী এই ছাত্রের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর মা-বাবার কান্না যেন থামছে না।
সুজন মিঠাপুর এলএন উচ্চ বিদ্যালয় এবং নটর ডেম কলেজ এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন। সুজন বাবা-মায়ের বড় সন্তান। সুজনের বাবা বাচ্চু মৃধা অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল সুজন লেখাপড়া শেষ করে বড় কোনো চাকরি করে সংসারের দুঃখ ঘোচাবে। সেই স্বপ্ন এক নিমিষেই ধ্বংস হয়ে গেল পুলিশের গুলিতে।
আজ শুক্রবার সুজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা শান্তা বেগম ছেলের শোকে বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবাও প্রায় জ্ঞানহারা।
বিলাপ করে সুজনের মা বলেন, ‘আমার সোনা মানিক কখনো কোনোদিন কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করেনি। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত না। ওর বাবা অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাত। আমাদের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে সুজন অনেক বড় চাকরি করবে। কিন্তু আমাদের আর কিচ্ছু রইল না। পুলিশ আমাদের সব শেষ করে দিল।’
নিহত সুজনের সহপাঠী বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘একজন মেধাবী বন্ধুকে হারিয়ে আমরা মর্মাহত। এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে আমরা ঘৃণা করি। এ অঞ্চলে সুজনের মতো মেধাবী ছাত্র ছিল না। সুজন বেঁচে থাকলে অনেক বড় কিছু হতো।’
সুজনের চাচা আলমগীর মৃধা বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় আমার চোখের সামনে উপপরিদর্শক (এএসআই) এনামুলের নির্দেশে কনস্টেবল মাসুদ গুলি ছোড়ে। সেই গুলিতে সুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।’
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. অখিল সরকার বলেন, ‘সুজনের গলায় ও পিঠের দিকে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আঘাতটি গুলির চিহ্ন বলে মনে হচ্ছে।’
মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সার্কেল মো. মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, আমরা এখনো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাইনি। পুলিশের গুলিতেই সুজন নিহত হয়েছেন কি না, এ বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই।’ এ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজ দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত সুজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধুরাইল ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বিরঙ্গল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গতকাল সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণা করার সময় দুই সদস্য প্রার্থী আব্দুল মোতালেব মৃধা ও আয়ুব আলী ফকিরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে সুজন নিহত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষে ছাত্র।