নাসির-তামিমার মামলা নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা
ডিভোর্স না দিয়ে অন্যের স্ত্রীকে বিয়ের অভিযোগের মামলায় ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। অবশ্য এ সময়ে বিচারক ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আজ সোমবার (২৯ মে) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আদালতে আইনজীবী ইশরাত হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলাটির সাক্ষ্য চলার সময় কোনো কারণ ছাড়াই আইনজীবী মোরশেদুল ইসলাম আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধরের হুমকি দেন এবং বারবার শারীরিকভাবে আঘাত করার জন্য জন্য তেড়ে আসেন। এসময় আদালতে উপস্থিত অন্য আইনজীবীরা তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। আমি তার এই আচরণে নিজের ও আমার সহযোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আদালত কক্ষের ভেতরেই যদি তিনি শারীরিক আঘাত করার জন্য বারবার তেড়ে আসেন তাহলে বাইরে কী করতে পারেন? একজনের মামলা চালাতে এসে আইনজীবী হয়ে মারধর ও হুমকির সম্মুখীন হতে হলে মামলায় লড়া খুব কঠিন। আমি এ বিষয়ে আদালতে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করেছি। একইসঙ্গে ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনে লিখিত অভিযোগ জমা দেব।’
এ বিষয়ে আইনজীবী মোর্শেদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালতে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। শুনানির সময় দুই পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে অনেক তর্ক হয়। সেই তর্ককে উনি হুমকির অভিযোগ বলছেন। এজলাসের ভেতরে কাউকে হুমকি দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি হুমকি দিতাম তাহলে বিচারক আমাকে দেখতো ও ছেড়ে দিত না। এমন কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি।’
আইনজীবী মোর্শেদ আরও বলেন, আজ রূপা আক্তার নামে একজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরপরে তাকে জেরা করা হয়। জেরা শেষে বিচারক পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৪ জুলাই পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ক্রিকেটার নাসির ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। তবে, নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গত বছরের ৬ মার্চ মহানগর দায়রা আদালতে নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করেন তাদের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু। অন্যদিকে, সুমি আক্তারকে অব্যাহতির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
পরবর্তীতে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষের আবেদনের শুনানি গ্রহণ শেষ হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদের আদালত আসামি ও বাদীপক্ষের পৃথক দুটি রিভিশন খারিজ করে দেন।
২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের আট বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জানেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেছেন; যা ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তাম্মিকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন নাসির। তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার আট বছর বয়সী মেয়ে মারাত্মকভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।