দলিল লেখককে মারধরের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক দলিল লেখককে মেরে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। আজ রোববার (১১ জুন) দুপুরে রূপাপাত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
এর জেরে ইউপি ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করেছে।
জানা যায়, বোয়ালমারী সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কলিমাঝি গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মোল্যার ছেলে মো. ওবায়দুর রহমান (৬৩) আজ সকাল ১১টার দিকে সুতালিয়ায় অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কাছে যান ওয়ারিশান সনদ আনতে। এ সময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের লোকজন দলিল লেখককে মেরে আহত করে। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে কলিমাঝি থেকে লোকজন যায় ওবায়দুরকে উদ্ধার করতে। তাদের বিরুদ্ধে ইউপি ভবনে হামলা বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান।
এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময় পুলিশ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ মোল্যা (২৪), ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাহিদুল মোল্যা (৪০) ও ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের সম্মান শ্রেণির ছাত্র সৌরভকে আটক করে।
দলিল লেখক ওবায়দুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি একটি ওয়ারিশান সনদ আনতে পরিষদে যাই। চেয়ারম্যানের কাছে ওয়ারিশান সনদ চাইলে তিনি পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা কেন দেব জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আমার বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করে। কলিমাঝি বাড়ির কথা বলতেই গালি দিয়ে বলে, তোরা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিস। বলেই নিজে মারধর শুরু করে। পরে চেয়ারম্যানের লোকজন মেরে রক্তাক্ত জখম করে। খবর পেয়ে আমার বাড়ি থেকে লোকজন আমাকে আনতে গেলে সে আটকে রেখে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমাদের লোকজন কোনো ধরনের হামলা বা ভাঙচুর করেনি। তিনজনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে।’
এ সময় আটক তিনজনকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান ওবায়দুর রহমান। তিনি সুস্থ হয়ে মামলা করবেন বলেও জানান।
রূপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান (সোনা) এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আজ শিশু কার্ডের চাল দিচ্ছিলাম। এ সময় একটা লোক এসে একটি দলিল বের করে ভোটার আইডি কার্ড বের করে দিতে বলে। এ নিয়ে কম্পিউটার অপারেটরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। শোরগোল শুনে এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলাম কী হয়েছে? তখন সে আমাকে বলে ভোটার আডি কার্ড বের করে দে। ভোটার আইডি কার্ড উপজেলা থেকে দেওয়া হয় বলার পর বলে, তুই আমাকে আইন শেখাস। তখন বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে কলিমাঝি বলার পর বলেছি, কলিমাঝি বলেই এ রকম ব্যবহার করেন। বলার সঙ্গেসঙ্গেই সে (ওবায়দুর) আমার গায়ে হাত তুলেছে। তখন আমার লোকজন কয়েকটা চড়-থাপ্পড় দিয়েছে। তাও আমি তাকে বুকের ভিতর রেখে মার ঠেকাতে গিয়ে নিজে কিলঘুষি খেয়েছি। খবর পেয়ে তার লোকজন এসে পরিষদে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে তিনজনকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।’
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, ‘ওবায়দুর রহমান আমার কাছে এসেছিল। সে একটু ডিসপারেট দেখলাম। তাকে আগে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সে ওয়ারিশান সনদ আনতে গেলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের লোকজনের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়ে ছিড়ে কেটে যায়। খবর পেয়ে কলিমাঝির এক দেড়শ লোক গিয়ে পরিষদ ভবনে হামলা চালায়। এ খবর পেয়ে ডহরনগর ফাঁড়ি পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তিনজনকে আটক করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’