ভিজিএফের চাল নিতে গিয়ে হামলার শিকার, অবশেষে হাসপাতালে
নাটোরে ভিজিএফের চাল নিতে গিয়ে হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে। অভিযোগের তীর নলডাঙ্গা পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির ও তাঁর অনুসারীদের দিকে। যদিও এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন তিনি। এদিকে, ওই পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম পিয়াসের দাবি, বিভিন্ন ইস্যুতে মেয়রের সঙ্গে বিরোধ থাকায় তার ওয়ার্ডের ও তার অনুসারী সুবিধাভোগীদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ সকাল থেকে ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের গরিব ও দুস্থদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ চলছিল। এ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ। এ অবস্থায় বেলা ১টার দিকে ৪ নং ওয়ার্ডের লাইনে অপেক্ষমান সুবিধাভোগীদের অনেককে মারপিট করে পৌরসভা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ, মারপিট করা ব্যক্তিরা মেয়র মনিরুজ্জামানের লোকজন। এ অবস্থায় অন্যরা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হন তারা। এ সময় ক্ষুরের আঘাতে মনিরুল ইসলামসহ চারজন মারাত্মক আহত হন। আহতদের চারজনকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুরের আঘাতে আহত হয়ে নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনিরুল অভিযোগ করেন, দুপুর ১টার দিকে মেয়র মনিরুজ্জামানসহ তার সমর্থকেরা পৌরসভায় ঢুকে তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এনিয়ে বাকবিতণ্ডার শুরু হয়। একপর্যায়ে মেয়রের লোকজন তাদের এলোপাথাড়ি মাটপিট শুরু করে। তাকে ক্ষুর দিয়ে জখম করা হয়।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর আহত মিঠুনের অভিযোগ, মেয়র সমর্থকরা তাকে হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেছেন। এঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান আহত মিঠুন।
জানা গেছে, সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জেলার রকির অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তারা ছারপত্র নিয়ে চলে গেছেন।
নলডাঙ্গা পৌরসভার ১ নং প্যানেল মেয়র ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম পিয়াস জানান, পৌরসভার নানাবিধ অনিয়মের প্রতিবাদ করাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছে। ওই বিরোধের জেরে আজ তার ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের ওপর মেয়র ও তার সহযোগী কয়েকজন হামলা চালান। তারা মারপিট করে পৌরসভা থেকে সুবিধাভোগীদের বের করে দেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই সুবিধাভোগীরা তার অনুসারী হওয়ায় এমনটি করা হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি নিজেও পৌর কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বাধা দিতে গেলে তার দিকে তেড়ে আসেন মেয়রসহ তার সমর্থকরা।
নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনির জানান, চাল বিতরণের সময় কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল যুবক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছিল। তাদের চলে যেতে বললে খারাপ আচরণ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মারপিট বা ক্ষুরে আঘাতের ঘটনা সঠিক নয়।
মেয়র বলেন, ‘তারা চাল নিয়ে ঘরের মধ্যে ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য তাদের চলে যেতে বলা হয়। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। আমার সঙ্গে শরিফুল ইসলাম পিয়াসের কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানান, ভিজিএফের চাল বিতরণের সময় পৌরসভার ভেতরে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছেন। তবে এখনও কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।