এবারের ঈদের ছুটিতে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন না পর্যটকেরা
এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন না দেশি কিংবা বিদেশি পর্যটকেরা। প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢল নামলেও এবার চিত্র থাকবে ভিন্ন। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষায় পর্যটক প্রবেশে দেওয়া হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা।
বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের নদ-নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম চলছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত থাকবে এ প্রজনন মৌসুম। এ কারণে প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে সাগর ও সুন্দরবনের নদী-খালে জেলেদের মাছ শিকার এবং পর্যটনবাহী নৌযান চলাচলে মৎস্য অধিদপ্তর ও বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা চলছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বনবিভাগ। নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় (বাগেরহাট) বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়াতে গত ২০ মে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য অধিদপ্তর। মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে একাত্মতা বজায় রেখে সুন্দরবনের নদী-খালেও প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন করতে সুন্দরবনে পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল বন্ধের পাশাপাশি মাছ শিকারও বন্ধ রাখা হয়েছে। আর মুলত ১লা জুন থেকে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, যা কার্যকর থাকবে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। ফলে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কেউই সুন্দরবনে মাছ শিকার ও ভ্রমণে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছের প্রজনন স্বাভাবিক রাখতে গত ১ জুন থেকে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত পর্যটকবাহী নৌযান সুন্দরবনের অভ্যন্তরে চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। এর ফলে নিষেধাজ্ঞার সময় জুড়ে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন ও ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।’ তিনি আরও জানান, এই সময়ে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য জেলে ও দর্শনার্থীদের কোনো ধরণের অনুমতি বা পাস-পারমিট দেওয়া হবে না। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে প্রবেশ করবেন তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুন্দরবনের ট্যুর অপারেটর গোলাম রহমান বিটু জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে টানা সাত মাস বন্ধ ছিলো সুন্দরবন ভ্রমণ। এরপর ২০২০ সালের ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলে দেয়া হয়েছিল। ফলে দীর্ঘদিন পর হলেও প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পে। ওই সময়ে অবসাদ কাটাতে অনেকেই সুন্দরবনে বেড়াতে আসেন। এরপর গত ২০২১ ও ২০২২ সালের জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমেও টানা তিন মাস সুন্দরবন ভ্রমণ বন্ধ থাকে। কিন্তু আবারও সুন্দরবনে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আসায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। আসন্ন ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসতো। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে ভ্রমণ করতে পারবেন না তারা। অন্তত ঈদের ছুটির তিনদিন সুন্দরবন খুলে দিলে তাদের সংকট কিছুটা মোকাবিলা করা যেত বলে জানান এ পর্যটন ব্যবসায়ী।
এদিকে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, মাছের প্রজনন মৌসুম ও বংশ বিস্তারে ১ জুন থেকে সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর পর্যটকেরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন। বন্ধের এ সময়টাতে বনের অভ্যন্তরের পুরোনো পর্যটন স্পটগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন এবং নতুন আরও চারটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট নির্মাণ করা হচ্ছে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পর্যটন স্পটগুলো হচ্ছে সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগের শেখেরটেক, আলীবান্ধা, কালাবাড়ী ও কৈলাশগঞ্জ পর্যটন কেন্দ্রে। এই পর্যটন স্পটগুলো নির্মাণ হলে বিশ্ব ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপার লীলাভূমি সুন্দরবনের প্রতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। বেলায়েত হোসেন আরও জানান, প্রতিবছর হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। এই পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে করমজল, হাড়বাড়ীয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, নীলকমল ও কলাগাছিয়া। তবে সহজ ও সময় কম লাগার কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা বেশি আসেন করমজল ও হাড়বাড়ীয়া ইকো ট্যুরিজম স্পটে।