গোপালগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, চিকিৎসক পলাতক
গোপালগঞ্জ শহরের পোস্ট অফিস এলাকার ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হেলথকেয়ার ক্লিনিকে নাকের পলিপাসের চিকিৎসা নিতে এসে এক রোগী মারা গেছেন। গত ৪ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে এ ঘটনার পর থেকে ওই চিকিৎসকেরা পলাতক রয়েছেন।
মারা যাওয়া ওই রোগীর নাম হাফিজুর চৌধুরী (৪২)। তার বাড়ি সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সিংগারকুল গ্রামে।
তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বলছে, কর্তৃপক্ষের ভুলে নয় চিকিৎসকের ভুলে এমনটি হয়েছে। জেলার সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রোগীর স্বজনদের সাথে মীমাংসার জন্য কয়েক দফায় সালিশ বৈঠকে বসা ও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্বজনদের মোটা অংকের টাকার অফারও দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৩ জুলাই (সোমবার) রাত আটটার দিকে নাকের পলিপাসজনিত সমস্যা নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে ভর্তি হন হাফিজুর চৌধুরী (৪২)। এর আগে হাফিজুরকে অপারেশনের জন্য ১১টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। রিপোর্ট ঠিক থাকায় ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নাকের পলিপাসের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় হাফিজুরকে। সেখানে নেওয়ার পর হাফিজুরকে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে ওই ক্লিনিকের ডাক্তার ডা. হিরম্ব রায় ও ডা. গোলাম সরোয়ার। চেতনানাশক পুশ করার পর মারা যান হাফিজুর। বিষয়টি স্বজনরা বুঝে উঠার আগেই স্বজনদের কাছে চিকিৎসার কথা বলে নিজেরা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কৌশলে খুলনার একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায় ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। সেখানে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত দেখে রোগীকে ফেরত দেন। পরে এ নিয়ে মৃতের স্বজনরা অভিযোগ তুললে কয়েক দফায় মীমাংসার জন্য সালিশ বৈঠকে বসা হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মোটা অংকের অফারও দেওয়া হয় মৃতের স্বজনদের। এখবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মারা যাওয়া হাফিজুরের ছোট ভাই শহিদুল চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সব রিপোর্ট ঠিকঠাক আসে। রিপোর্ট দেখে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর আমাদের না জানিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আমাদেরকে জানানো হলে আমরা আমার ভাইয়ের সাথে যাই। খুলনা পৌঁছানোর পর সেখানকার একটি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ভাইকে মৃত দেখে ফেরত দেয়। পরে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হেলথকেয়ার ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে প্রেসার বেড়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
শহিদুল চৌধুরী আরও বলেন, আমার ভাইয়ের যদি প্রেসার বেশি থাকে তাহলে তো সেটি পরীক্ষায় আসবে। কিন্তু পরীক্ষায় আমার ভাইয়ের প্রেসার ঠিক আছে বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়। সেই রিপোর্ট দেখেই আমার ভাইকে অপারেশন করানোর জন্যে ওটিতে নেওয়া হয়। ওটিতে নেওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর আমাদের খবর দেওয়া হয় আমার ভাইয়ের অবস্থা ভাল না। তারা আমাদের না জানিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা করে। পরে আমরা রাস্তা থেকে তাদের সাথে খুলনা যাওয়ার জন্য যুক্ত হই। অ্যাম্বুলেন্সে আমার ভাই কোন কথা বলেনি। তখনই আমাদের কাছে মনে হয়েছে আমার ভাই নাই। পরে খুলনার ওই চিকিৎসকের কাছে জানার পর বুঝতে পারি আমার ভাই মারা গেছেন। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
নিহত হাফিজুরের আরেক ছোট ভাই জিল্লাল চৌধুরী বলেন, আমার ভাইকে তারা ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আমাদের মোটা অংকের টাকা দেওয়ার অফারও করেন। কিন্তু আমরা সেই অফার নাকচ করি। এতে বোঝা যায় তাদের গাফিলতির কারণে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন ডা. গোলাম সরোয়ার ও ডা. হিরম্ব রায়। তাদের মোবাইলফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে ক্লিনিকের মালিক অমর কান্তি রায়ের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ফোনে কিছু বলা যাবে না সাক্ষাতে সামনাসামনি বলতে হবে। পরে তার সাথে কথা বলার জন্য ক্লিনিকে গেলে তিনি সাংবাদিকদের দেখে কৌশলে পালিয়ে যান।
তবে ক্লিনিকের ম্যানেজার শামিম বলেন, অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ম্যানেজমেন্টের কোনো ভুল নেই, যা হয়েছে চিকিৎসকের ভুলে হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং সেটা শিগগিরই করা হবে।