বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ‘এক দফা’ ঘোষণা হয়েছে জাতিকে মুক্তির জন্য। এই পদযাত্রা এখন আর পদযাত্রা নয়, এটি জনগণের বিজয়যাত্রায় রূপ নিচ্ছে।”

আজ বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেলে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট মাঠে  রংপুর বিভাগীয় পদযাত্রা কর্মসূচির প্রাক্কালে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতীদল, মৎসজীবী দল ও জাসাসের যৌথ আয়োজনে এ পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পদযাত্রা কর্মসূচির রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী এবং বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাহতাব, তাঁতীদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জাসাস সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল প্রমূখ।

প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল নিজেকে দিনাজপুরের বুড়ো সন্তান উল্লেখ করে বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমাদের নেত্রী দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াও দিনাজপুরের সন্তান। বক্তব্যের শুরুতেই পদযাত্রায় যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের উপর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানান এবং হামলায় আহতদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দেশকে মুক্ত করতে, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে জনগণকে জেগে উঠতে হবে। দেশ ও মাটিকে রক্ষার জন্য জেগে উঠতে হবে। পদযাত্রায় সবাইকে শামিল হয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশনায়ক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ত্বরান্বিত করতে হবে।’

‘এবারের লড়াইটা একটু ভিন্ন। এ লড়াই কঠিন লড়াই। আমাদের স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকার লড়াই’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রের মোড়কে সেই পুরোনো বাকশালকেই ফিরিয়ে এনেছে। সেজন্য তারা হিরো আলমের মতো প্রার্থীকেও সহ্য করতে পারে না। লজ্জা-লজ্জা-লজ্জা। সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সার-কীটনাশকসহ সব জিনিসের মূল্য ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই এই বাকশালী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। শিগগিরই এ গণআন্দোলনে সরকারের পতন হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

সমাবেশ থেকে চলমান পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে লক্ষ্মীপুরে কৃষকদলনেতা সজীব হোসেন হত্যার প্রতিবাদে আগামী ২১ জুলাই সারা দেশে শোকযাত্রা করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।

পদযাত্রায় যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের পথে পথে বাধা-হামলা উপেক্ষা করে আসতে হয়েছে। হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। আজ দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর থেকে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাসযোগে দিনাজপুরে বিভাগীয় পদযাত্রায় অংশ নিতে আসছিলেন। দুপুরে হাবিপ্রবির সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি বাস আটকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভাঙচুর করে। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। এরপর থেমে থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। এ সময় চারটি বাস ভাঙচুর করা হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার প্রবেশ মুখেসহ বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।