বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সামদ্রিক সতর্কবার্তায় পরিচালকের পক্ষে এ কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন।
মো. মনোয়ার হোসেন জানান, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের অদূরে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ্রও দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আমাদের মোংলা প্রতিনিধি আবু হোসাইন সুমন জানান, চলতি ইলিশ আহরণ মৌসুমের শেষ ভাগে এসে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করলে এ দুর্যোগে তা বন্ধ হয়ে গেছে। লঘুচাপের কারণে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও হালকা-মাঝারি ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে মোংলাসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে। এতে এক ধরনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে উপকূলজুড়ে।
এদিকে সাগরের ৬৫ দিনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেরা সাগরে নামলেও তাতে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আকস্মিক এ লঘুচাপ। লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হওয়ায় সুন্দরবনের দুবলার চর, আলোরকোল, নারকেলবাড়িয়া ও ভেদাখালীসহ বিভিন্ন খালে অবস্থান করছে শত শত ট্রলারের হাজার হাজার জেলে-মাঝিমাল্লা।
বাগেরহাটের শরণখোলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মো. কবির হাওলাদার বলেন, একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপরদিকে সাগর ও সুন্দরবনে দফায় দফায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞায় আমরা জেলেরা এখন একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। আর দুর্যোগ তো আমাদের পিছনে লেগেই আছে। যখনই ইলিশ ধরা পড়া শুরু হয়, তখনই দুর্যোগ হানা দেয়। দুর্যোগের কারণে আমার আড়তে এফ বি খায়রুল ইসলাম, এফ বি মা-বাবার দোয়া, এফ বি পূর্ণিমা, এফ বি মায়ের দোয়া, এফ বি জিসানসহ পাঁচটি ট্রলারমালিক চলতি ইলিশ আহরণ মৌসুমে কম হলেও ৫০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছেন। ইলিশ মৌসুমও প্রায় শেষ পর্যায়ে, তারমধ্যে আবার দুযোগের হানা। তাই এ বছর আর লোকসান কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না।
বাগেরহাটের শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় সাগরে টিকতে না পেরে সব ফিশিং ট্রলার বিভিন্ন ঘাটসহ সুন্দরবনের নদী-খালে আশ্রয় নিয়েছে। বনবিভাগ ও কোস্ট গার্ড ওই সব ট্রলার ও ট্রলারে থাকা জেলেদের নিরাপদ অবস্থানের ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন বলেও জানান তিনি।
মোংলা আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে আগামী তিন থেকে চার দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে মোংলাবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে আবহাওয়া খুব বেশি একটা খারাপের দিকে যাওয়ার মতো সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেও জানান তিনি।