প্রতিরোধে পিছু হটছে কেএনএফ
বান্দরবানে দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে রোয়াংছড়ি-রুমা উপজেলায় অবস্থান নেওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিরোধে পিছু হটছে বলে জানা গেছে। কেএনএফ আতঙ্কে নির্যাতনে গ্রাম ছেড়ে পালানো পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ফিরছে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে। পাহাড়ের জুমক্ষেত-খামারে যাচ্ছে জুমিয়া পরিবারগুলো।
এদিকে রোয়াংছড়ি উপজেলা ব্যতিত সব উপজেলা পর্যটককদের ভ্রমণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কেএনএফ আতঙ্কে থমকে যাওয়া রুমা-রোয়াংছড়ি সড়ক উন্নয়নকাজ দ্রুত শুরুর দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে কিছু কিছু এলাকায় আতঙ্ক থাকলেও সেনাবাহিনী বলছে, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। কোনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠী বান্দরবান ভূখণ্ডে বসে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে পারবে না।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কিছু পাড়ায় ভয়, আবার কিছু পাড়ায় সোচ্চার সাধারণ মানুষ। কেএনএফ আতঙ্কে দীর্ঘ এক বছর কঠিন সময় পার করছে তারা। অস্ত্রধারী কেএনএফ সদস্যদের ভয়ে এখনও বন্ধ অনেক স্কুল। জুমক্ষেত-খামারসহ গ্রামে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই সন্ত্রাসী বাহিনী। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত অভিযানের মুখে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে কেএনএফ বাহিনী।
এক সময় রোয়াংছড়ি উপজেলার খামথাংপাড়া, দুর্নিবারপাড়া, ক্যাপ্লাংপাড়া গ্রামে শক্ত অবস্থানে থাকা কেএনএ বর্তমানে পিছু হটছে। কোনঠাসা দলটি আশ্রয় নিয়েছে পাক্যংপাড়া দুর্গম পাহাড়ে।
স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক মাসের তুলনায় পরিস্থিতি এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কে কিছু দূর পরপর সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বম সম্প্রদায়ের অনেক নারী ও পুরুষ জানান, কেএনএফ নিজ বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু উচ্ছৃখল ও পথভ্রষ্ট যুবকের কারণে পুরো বম জাতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। অস্ত্রধারী এসব যুবক এসে প্রায় সময়ই গ্রামে হুমিক ও লুটপাট করে। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। যার কারণে সহজ-সরল পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এলাকা ছাড়া। কেএনএফের হুমকি ও চাদাঁবাজির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কের উন্নয়নকাজ। এই সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ হলে এলাকার স্বাভাবিক জীবন উন্নতিসহ ধসনামা পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত বলেন, প্রথমে নিরাপত্তাজনিত এবং পরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সড়কটির উন্নয়নকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে রুমা অংশে কাজ চলছে। সড়কটির উন্নয়ন বরাদ্দ হাতে এলে কাজ দ্রুত শুরু হবে।
রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা বলেন, পূর্বের তুলনায় এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে এনেছে সেনাবাহিনী। এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছে। তবে, রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে বান্দরবান সেনা জোনের জোন কমান্ডার লে.কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, সীমান্ত সড়কসহ পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থতির উন্নয়ন এবং অপারেশন উত্তরণের আওতায় বাংলাদেশ সিনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে কেএনএ সদস্যরা গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে থাকলেও শেষ রক্ষা হবে না তাদের। মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে নিরাপত্তা বাহিনী।