সুলতান’স ডাইন নিয়ে যা আছে অভিযোগপত্রে
সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসই ছিল, বলছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশারফ হোসেনের আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে সংস্থাটি। সেখানে মিথ্যা প্রচারণায় দুই ব্যক্তিকে দোষী চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন–কনক লায়লা ও আব্দুল হাকিম। তারা বেসরকারি যমুনা ব্যাংকের খণ্ডকালীন কর্মকর্তা ছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, সুলতান ডাইন’সের খাবারের বিষয়ে অভিযোগকারীদের কোনো অভিযোগ ছিল না এবং ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং, বিবাদী কনক লায়লা ও আব্দুল হাকিম সুলতান ডাইন’সের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি করে এবং আব্দুল হাকিম তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ২ মার্চ সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখায় সাতটি হাফ (অর্ধেক) কাচ্চি বিরিয়ানি কিনতে ওর্ডার করেন কনক লায়লা। সেদিন দুপুরে টাকা পরিশোধ করে তিনি খাবার নিয়ে যান। বেলা আড়াইটার দিকে কনক লায়লা সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার হটলাইন নম্বরে ফোন দেন তিনি। খাবার নিয়ে সুলতান’স ডাইনের সহকারী মহাব্যবস্থাপকের কাছে অভিযোগ করেন। পরে সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ দুই প্যাকেট কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে যমুনা ব্যাংকের বনানী শাখায় যান। তখন কনক লায়লা সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তা কামালের কাছে অভিযোগ করেন, কাচ্চিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে বিড়ালের মাংস দেওয়া হয়েছে। তিনি কামালকে হুমকি দিয়ে বলেন, র্যাব ডেকে ধরিয়ে দেবেন।
কামালকে যমুনা ব্যাংকের নিচতলায় আটকে রাখা হয়। তখন তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন আবদুল হাকিম। একপর্যায়ে সুলতান’স ডাইনের লোকজন গিয়ে কামালকে উদ্ধার করেন।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘটনার তিন দিন পর গত ৫ মার্চ কনক লায়লা ফেসবুকে লেখেন, ৩ মার্চ সুলতান’স ডাইন থেকে সাতটি কাচ্চি আনেন। খাওয়ার সময় মাংসের হাড় দেখে সন্দেহ হয় তার। কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংস খাওয়াচ্ছে। পরবর্তীতে, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংসের ব্যবহার নিয়ে কনক রহমানের ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি সবার নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। এ নিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বার্তা বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে পিবিআই।
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুলতান’স ডাইনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আশরাফুল আলম জানান, তাদের কাচ্চি বিরিয়ানিতে যে খাসির মাংস দেওয়া হয়, তার ওজন ছয় থেকে নয় কেজি। বেশি ওজনের খাসির মাংস সেদ্ধ হয় কম। তাই সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে, বেশি ওজনের খাসির মাংস কাচ্চিতে দেওয়া যাবে না।
পরে রেস্তোরাঁটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গত মার্চে তদন্ত করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই তদন্তে সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের বদলে অন্য প্রাণীর মাংস দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পায়নি সরকারি সংস্থাটি। কাচ্চি তে খাসি বাদে অন্য প্রাণীর মাংসের ব্যবহার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় সুলতান’স ডাইনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় অধিদপ্তর।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামি আব্দুর রহমান মীমাংসার নামে ১০ হাজার টাকা না দেওয়ায় বিভিন্ন হুমকি দেয়। এ কারণে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৮৫/ ৫২৬ ও ৩৪ ধারার অভিযোগ এবং প্রধান আসামি কনক লায়লার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০০/৩৪ ধারার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
নথি থেকে জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংস দেওয়ার মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশারফ হোসেনের আদালতে নালিশি মামলা করেন সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ। পরে আদালত এ অভিযোগ তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ বিষয়ে আদালতসূত্রে জানা গেছে, আগামী ধার্য তারিখে এই অভিযোগপত্রটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে। এরপরে বিচারক বাদীর আবেদনের উপর ভিত্তি করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা আসামিদের আদালতের হাজিরের নির্দেশ দিতে পারেন।