মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে সফল কৃষকরা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক ছগির মিয়া।
মালচিং হলো এমন একটি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি, যে পদ্ধতির চাষাবাদে জমি রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকে। এতে পানি, সার, ওষুধ খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমে যায়। ফলে উৎপাদন খরচও অনেক কমে যায়। ফলন হয় বেশি এবং গাছের জীবন দীর্ঘ হয়। তাই মুনাফা হয় কয়েকগুণ।
জানা যায়, মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ভৈরবের চণ্ডীবের মধ্যপাড়া এলাকার কৃষক ছগির মিয়া গত বছর ৩০ শতক জমিতে আগাম জাতের টমেটোর আবাদ করে সাড়ে চার লাখ টাকা বিক্রি করেন। তাঁর উৎপাদন খরচ হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। খরচ বাদে তাঁর লাভ হয় দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা।
চলতি বছরও ছগির মিয়া মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটোর আবাদ করেছেন। একই জমিতে চাষাবাদ করায় এবার তার উৎপাদন খরচ হয়েছে অর্ধেকেরও কম। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ১০০ কেজি করে টমেটো খুচরা বাজারে ১০০ এবং পাইকারি বাজারে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ফলন এবং বাজারদর গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় এবার সাড়ে ছয় লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।
নতুন এই পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে কৃষক ছগির মিয়া ব্যাপক সাফল্য ও অধিক লাভবান হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। ফলে চলতি বছর তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে আরও চার কৃষক টমেটোর আবাদ করেছেন। তাঁরাও সাফল্য পেয়েছেন বলে জানান।
এদিকে চলতি বছরেও প্রতিদিন অনেক কৃষক ছগির মিয়ার টমেটো ক্ষেতে এসে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাঁরাও আগামীতে এই পদ্ধতিতে আগাম টমেটোর আবাদ করবেন বলে জানান।
কৃষি বিভাগ জানায়, জমিকে উত্তমরূপে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করে সেখানে বীজ বপন করতে হয়। তারপর সেই বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মালচিং পেপার হলো বিশেষ ধরনের পলিপেপার (পলিথিন)। বীজগুলো থেকে চারা গজানোর পর চারার স্থানগুলো থেকে মালচিং পেপার ছিঁড়ে দিতে হয়। যাতে চারাগুলো সহজে বেড়ে উঠতে পারে।
এই মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচের অতিরিক্ত পানি জমে চারা বিনষ্ট হয় না। অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে জমি চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিক কম লাগে। উৎপাদন খরচ কমে যায়। জমির ঊর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলন অনেক বেশি হয়। গাছের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এতে কৃষক সব দিক থেকে লাভবান হয়।
কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শে কৃষক ছগির মিয়ার মতো আরও অনেকে মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটোসহ অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসল আবাদ করছেন। তাঁরা লাভবান হচ্ছেন। এমন তথ্য জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, আগামীতে এই উপজেলায় আগাম টমেটোসহ অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসল এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে এলাকার সবজির চাহিদা পূরণসহ কৃষকরা লাভবান হবেন।