দিনাজপুরে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী বউমেলা
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে যুগ যুগ ধরে চলে আসা সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার ২৫ অক্টোবর বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ স্কুল মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি বাঁসিয়াহাটি অথবা আদিবাসীদের বউমেলা নামেও পরিচিত।
মরিচা ও নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সহযোগিতায় বীরগঞ্জ থানা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতি এ মেলার আয়োজন করে।
এই মেলায় প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী হাজার হাজার মানুষের মধ্যে সাঁওতাল তরুণ-তরুণীরা তাদের জীবন সঙ্গী খুঁজতে আসে এই মেলায়। ১৮ পেরিয়ে ২৫ ছুঁই ছুঁই বয়সের তরুণ-তরুণীরা রকমারি সাজে বাড়ির বড়দের সঙ্গে মেলায় আসে জীবন সঙ্গীর নজর কাড়তে। মূল মেলা শুরু হয় বিকেল ৫টায় চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। কিন্তু সকাল থেকেই আদিবাসীরা দলে দলে আসা শুরু করে। এই মেলায় হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে।
মেলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তিল ধারণের জায়গা নেই। মানুষের চাপে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়াই কষ্টসাধ্য। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়াও মেলায় উপস্থিত ছিলেন হিন্দু ও মুসলমানরাও।
মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল বিপুল পুলিশ সদস্য।
মরিচা ইউপি চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম চৌধুরী হেলাল জানান, যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি চলে আসছে। মূলত মেলার শুরু কবে থেকে হয়েছে কেউ বলতে পারে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে ২০০ বছর ধরে এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পরের দিন কোনো ধরনের প্রচার ছাড়াই মাঠে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। চলতে থাকে বাদ্যের তালে তালে ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গানের আসর। স্কুলমাঠের একদিকে চলে কনে বাছাই পর্ব। সামাজিকতায় তারা উন্নত হওয়ার কারণে এখন আর এমন একটা বর-কনে পছন্দ তথ্য না পাওয়া গেলেও তাদের আনন্দটা আগের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে।
নিজপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, আগে কঠিন সামাজিক বিধিবিধান থাকলেও বর্তমানে অনেকেই রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি মেনে বিয়ে করছে। ঐতিহ্য অনুসারে সমতল ভূমির সাঁওতালদের বউ খোঁজার এই মেলায় বেছে নেওয়া হতো জীবনসঙ্গী। একসময় পাত্রী পছন্দ হলে পাত্র তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে যেত নিজের বাড়িতে। এখন সে প্রথা না থাকলেও, বর-কনে পছন্দের জন্য মেলায় ভিড় জমায় সাঁওতাল তরুণ-তরুণীরা। সঙ্গে অভিভাবকরাও থাকে। বাদ্য-বাজনার তালে চলে বউ বাছাইয়ের উৎসব। তবে সময়ের হাত ধরে এই প্রক্রিয়াতেও এসেছে পরিবর্তন।
আদিবাসী নেতা জুলি মুরমু বলেন, আগের মতো এখন আর প্রচলিত প্রথা চলে না। এখন পছন্দ হলেই বিয়ে হয়ে যায় না। বরং পছন্দ হলে তা অভিভাবকদের জানানো হয়। অভিভাবকরা একমত হলে সামাজিকভাবে শুরু হয় বিয়ের কাজ। মেলাকে কেন্দ্র করে দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজনরা ছুটে আসে নিমন্ত্রণ খেতে।
মেলা শেষে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল। তিনি মেলার সফলতা কামনা করেন এবং সাঁওতালদের স্বকীয়তা টিকিয়ে রাখতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।