চেঞ্জ এজেন্ট কনফারেন্সে ইতিবাচক পরিবর্তনের দৃঢ় প্রত্যয়
বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নানাবিধ কারণে সমাজে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়। জনগোষ্ঠীভেদে এই বৈষম্যের মাত্রা ভিন্ন হলেও তাদের পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি অন্যতম কারণ। ২০২২ সালের গণশুমারী অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৯১% ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী; যার একটি বড় অংশ শুধুমাত্র জাত-পাত ও পেশাগত পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার হয়। এই জনগোষ্ঠী দলিত জনগোষ্ঠী হিসেবে অধিক পরিচিত।
এছাড়া প্রায় ১৬.৫১ লাখ সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখেরও অধিক চা জনগোষ্ঠী রয়েছে; যারা পেশাগত পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী যারা লৈঙ্গিক বৈচিত্র্য এবং শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে সমাজে নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২,৬২৯ জন লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী এবং প্রায় ২৩,৬১,৬০৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও এর সুষ্ঠূ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার কারণে এদের অনেকেই সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের বাইরে থেকে যায়। উপরন্তু অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য লাঘবে কোন সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় তাদের প্রতি চলমান বৈষম্য নিরসনে কোন কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক চর্চা লাঘব এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর সহায়তায় ক্রিশ্চিয়ান এইড, ব্লাস্ট, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, নাগরিক উদ্যোগ এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন ২০২১ সাল থেকে ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণকে সক্রিয় করা এবং বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ। প্রকল্পের আওতায় খুলনা, সিলেট এবং রাজশাহী বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকে নির্বাচিত ২৯২ জন চেঞ্জ এজেন্ট তাদের নিজ নিজ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সরকারি পরিষেবাসমূহে তাদের অভিগম্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
চেঞ্জ এজেন্টদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্পটি তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে তাদের সম্পৃক্ত হবার সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে তারা একদিকে যেমন নিজ জনগোষ্ঠীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে পারছে। অন্যদিকে স্থানীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে কার্যকর অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে তারা নিজ জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি পরিষেবাসমূহ সহজগম্য করতে তুলতে অবদান রাখতে পারছে।
প্রকল্পটি নির্বাচিত চেঞ্জ এজেন্টদের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রকল্পের এইসকল দক্ষ এবং অভিজ্ঞ চেঞ্জ এজেন্টদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং তাদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রকল্পের অংশীদার সংস্থাসমূহের সহায়তায় ক্রিশ্চিয়ান এইড সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে ড্রীম স্কয়ার রিসোর্টে এ প্রকল্পের চেঞ্জ এজেন্টদের অংশগ্রহণে চেঞ্জ এজেন্ট কনফারেন্স আয়োজন করে।
কনফারেন্সে খুলনা, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগ থেকে প্রকল্পের চেঞ্জ এজেন্ট, ভলান্টিয়ার ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ প্রায় ৩৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। আয়োজনে অতিথি ছিলেন নুজহাত জাবিন, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ক্রিশ্চিয়ান এইড; জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ; কানিজ ফাতেমা, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, ওয়েভ ফাউন্ডেশন; আনজুম নাহিদ চৌধুরী, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ক্রিশ্চিয়ান এইড; উম্মে ফারহানা জারিফ, ক্লাস্টার লিডার, ব্লাস্ট।
আয়োজনে প্রকল্পের চেঞ্জ এজেন্টগণ নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে তাদের সফলতা তুলে ধরেন। এছাড়াও তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে কাজ চালিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।