সড়ক ও মহাসড়কে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ি থেকে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের সময় ৩২ জন চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। আজ বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর উত্তরা র‍্যাব-১ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ।

এর আগে গতকাল বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রটি প্রতিরাতে পণ্যবাহী গাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করত বলে জানায় র‌্যাব।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. রাকিব হাসান রাব্বি (২০), মো. টুটুল ইসলাম (১৯), ইমন (১৮), মো. ইফসুফ (২২), মো. জোনায়েত (১৯), মো. সিয়াম (১৮), মো. হাবিবুল্লাহ (৩৫), মো. জিহাদুর রহমান (২৪), মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ (২৪), মো. আকাশ মিয়া (২৬), মো. নান্নু হোসেন (২৭) ও মো. মাসুদ (৪০) সহ ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আসামিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের নগদ ১ লাখ ২ হাজার ৮৬৫ টাকা, ৬টি টর্চলাইট, তিনটি টার্গেট লাইন, একটি চার্জার লাইট, ২৯টি চাঁদা আদায়ের রশিদ, ৪টি রিফ্লেক্টিং বেস্ট জ্যাকেট, দুটি লাঠি ও ২৫টি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, পণ্যবাহী কোনো গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করলেই লেজার লাইটের আলো নিক্ষেপ করে থামিয়ে চাঁদা আদায় করতেন চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। বিশেষ করে মধ্যরাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে ওই সময় সড়কে এমন চিত্র শুরু হয়। এ চক্র ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিরাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে।

মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে দেশের সকল শ্রেণির নাগরিকরা বাজার করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা সবজি বাজারে অধিক দামে সবজি বিক্রির ব্যাপারে জনমনে অসন্তোষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেখানে পাইকারি বাজার এবং খুচরা বাজারে সবজির মূল্যে তারতম্য দেখা যায়। পণ্য উৎপাদনের স্থান থেকে পাইকারি বাজারে পরিবহণের সময় দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ধাপে ধাপে চাঁদা দেওয়ার কারণে পাইকারি বাজারে এসে বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। যার মাশুল গুণতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের। কিছু কিছু স্থানে র‌্যাব ও ভোক্তা অধিকারের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সাময়িক সময়ের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীতে আবার আগের মত উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

এ জনদুর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীসহ সারাদেশে র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিটের গোয়েন্দা দল তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পাইকারি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের চাঁদাবাজির তথ্য উদঘাটনের জন্য কাজ শুরু করে। এরপর অভিযান চালিয়ে ৩২ চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

মোস্তাক আহমেদ বলেন, যারা আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে র‌্যাবের নির্দেশনাক্রমে র‌্যাব-১ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। র‌্যাব নাগরিক সমাজকে আহ্বান জানাচ্ছে, যারা কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুত করবে তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে র‌্যাবকে সহায়তা করতে, এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।