অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে তদন্ত করতে আইজিপিকে নির্দেশ হাইকোর্টের

বাংলাদেশে কতজন বৈধ-অবৈধ বিদেশি কাজ করছেন তা তদন্ত করতে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যারা অবৈধভাবে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা কেন অবৈধ নয়, এ মর্মে রুলও জারি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) চারজন শিক্ষার্থীর রিটের পরিপ্রেক্ষিতর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত সোমবার (২০ মে) বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশিদের ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন চারজন শিক্ষার্থী। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনকারীদের পক্ষে রিটটি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন।
রিটে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ছাড়াও আইজিপি (পুলিশ) ও অতিরিক্ত আইজিপিকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৯ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার লাভের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশে বেকার সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। বেকারত্বের সমস্যা এমন চরম আকার ধারণ করেছে যে, এ দেশে নাগরিক কর্মসংস্থান খুঁজতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুবরণ করছে। অপরদিকে বাংলাদেশে গত দেড় দশকে বহু অবৈধ বিদেশি অবৈধভাবে কর্মক্ষেত্র দখল করে রেখেছে।
রিটে আরও বলা হয়, বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি অবৈধ বিদেশি শ্রমিক ও কর্মচারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োজিত রয়েছেন। ফলশ্রুতিতে এ দেশের নাগরিকরা যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকরা ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সমপরিমাণ টাকা এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, অপরদিকে অবৈধ বিদেশিরা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন। অর্থাৎ, আমাদের বাংলাদেশের শ্রমিকদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের অর্ধেকের বেশি অবৈধ বিদেশি কর্মচারীর মাধ্যমে বিদেশে চলে যাচ্ছে।
রিট আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, অবৈধ হওয়ার কারণে এসব বিদেশি ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদান না করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। ফলে একদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। অজানা কারণে সরকার এসব অবৈধ শ্রমিক স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।