বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক বরাদ্দ দাবি
আসছে জাতীয় বাজেটে দেশের তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথক বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে রাজশাহীর ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এই দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা এবং বিনা সুদে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান প্রদানের দাবি জানানো হয়। তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- দেশের তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর আবাসনের জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা, চাকরির যোগ্যতা শিথিল ও কোটা বরাদ্দ রাখা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দ রাখা, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত সংস্থার জন্য জমি বরাদ্দ করে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ রাখা, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর বর্তমান ৬০০ টাকা ভাতা বৃদ্ধি করা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য শিক্ষা বৃত্তির বরাদ্দ রাখা।
অনুষ্ঠানে দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা, সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সাগরিকা খান, জয়িতা পলি ও জুলি খান বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও আবহমান কাল থেকে তারা অবহেলিত, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তাঁরা সমাজে প্রতিনিয়ত বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে। তারা পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাসস্থান, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় আনতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণ সম্ভব নয়।
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর নেতারা বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের জরিপ মতে দেশে এই জনগোষ্ঠীর সদস্য ১০ থেকে ১২ হাজার। তবে তাদের মতে, দেশে লক্ষাধিক তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্য রয়েছে। রাজশাহী সিটি করটোরেশন এলাকায় ২৫০ জনসহ রাজশাহী জেলায় এই জনগোষ্ঠীর সদস্য প্রায় ৯০০ জন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সরকার স্বীকৃতি দিলেও গত ৯ বছরে এই জনগোষ্ঠীর জীবন ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসেনি, জীবনমানেরও উন্নয়ন হয়নি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এখনও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে, চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা জটিলতা। তারা অধিকার ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। আবাসন সংকটের ফলে তারা হিজড়া গুরুদের বাসায় আশ্রয় নিয়ে বাস করে। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর অনেকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পেলেও ব্যাংক ঋণের অভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেনি। ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয়’ টেকসই উন্নয়নের এই শ্লোগান বাস্তবায়ন করতে হলে আসছে জাতীয় বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য অনুষ্ঠানে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানানো হয়।