মৌলভীবাজারে বন্যা : রাস্তা পারাপারের সময় স্রোতে ভেসে দুই শিশুর মৃত্যু
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনিঘাটে রাস্তা পারাপারের সময় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে হৃদয় ও সাদি নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বেলা ১১টার দিকে চাঁদনিঘাট ইউনিয়নের শ্যামরকোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মায়িদ নামের আরেক শিশুও স্রোতে ভেসে যায়। তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তা পারাপারের সময় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলো— শ্যামরকোনা এলাকার জমির আলী ছেলে হৃদয় এবং একই এলাকার ফয়ছল মিয়ার ছেলে সাদি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন চৌধুরী জানান, বন্যার পানির স্রোতে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কমলগঞ্জে ধলাই নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে প্লাবিত করেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এলাকা, রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের খুশালপুর গ্রামে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নারায়ণপুর, চৈতন্যগঞ্জ, উবাহাটা, খুশালপুর ছয়কুট, বড়চেগ, জগন্নাথপুর, প্রতাপী, গোপীনগর, আধকানী, কাঁঠালকান্দিসহ প্রায় ৪০টি গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে।
মনু ও ধলাই নদীর বাঁধের ১৯টি স্থান ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কুলাউড়া পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড।
এ ছাড়া বন্যার পানি প্রবেশ করেছে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ ও জুড়ী উপজেলা পরিষদে। বন্যা কবলিত এলাকার অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে গেছে। আঞ্চলিক সড়কের অনেক স্থানে পানি উঠেছে। বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি রয়েছেন সাত উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। জেলার ৪০ ইউনিয়নের ৪৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, জেলার মনু, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধলাই নদীর পানি কিছুটা কমেছে। উজানে ভারত অংশে বৃষ্টি না হলে পানি কমতে শুরু করবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে মনিটরিং হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে সার্বক্ষণিক সেখানে নজরদারি করা হচ্ছে। বন্যা কবলিতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।’