মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে শিশু নির্যাতন, গ্রেপ্তার ১
মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে ১১ বছরের এক শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার অভিযোগে ইয়াছির আরাফাত (২৪) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দেউলভোগ সবুজহাটি এলাকায়।
নির্যাতনের শিকার শিশুটি এখন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। কেউ সামনে গেলেই ‘মারবেন না’ বলে চিৎকার করে উঠছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দেউলভোগ সবুজহাটি এলাকার ইমান আলীর বাড়ির ভাড়াটিয়া কাঠমিস্ত্রি সাগর হাওলাদারের ছেলে নাহিদকে (১১) মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের বাসার সামনে থেকে একই এলাকার ইয়াছিন আরাফাত, তার বন্ধু রিয়াদ, শাহাদাত, শিহাবসহ বেশ কয়েকজন মিলে ধরে নিয়ে যায়। তারা নাহিদকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। খবর পেয়ে নাহিদের মা-বাবা ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গেলে তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর তারা নাহিদকে বিবস্ত্র করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। একপর্যায় তার হাতের আঙ্গুল প্লাস দিয়ে চেপে ধরে। এরপর নির্যাতনকারীরা গ্যাস লাইটের আগুন ও চাবি পুড়ে লাল করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেয়। এভাবে দিনভর তাকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়।
নাহিদের মা-বাবা বেশ কয়েক বার ছেলেকে উদ্ধারের জন্য ওই বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনকারীদের হাত-পা ধরলেও তাদের মন গলেনি। রাত ৮টার দিকে ফের নাহিদের বাবা ছেলেকে আনার জন্য গিয়ে দেখেন সেখানে নাহিদ নেই। এরপর তিনি পাগলের মতো থানায় ছুটে যান। রাত ৯টার দিকে স্থানীয়রা নাহিদকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে তার মা-বাবাকে খবর দেয়। এরপর নাহিদের মা-বাবা ছেলেকে নিয়ে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক নাহিদকে ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
স্থানীয়রা জানায়, ইয়াছিন আরাফাতসহ এই নির্যাতনকারীরা এক বিএনপিনেতার ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় নানা অপকর্ম করে থাকে।
শ্রীনগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহফুজা পারভীন চৌধুরী বলেন, ‘নির্যাতনের কারণে শিশুটি এখন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। কেউ কাছে গেলেই ‘আমাকে আর মারবেন না, মারবেন না’ বলে চিৎকার করে উঠছে। সমাজসেবা অফিস ছেলেটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে।’
এই ঘটনায় সাগর হাওলাদার বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে শ্রীনগর থানায় মামলা করেছেন।
শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, ‘শিশুটিকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা অমানবিক। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা গ্রহণ করে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’