গাজীপুরে সংঘর্ষে নিহত ৯, আহত শতাধিক
গাজীপুরের শ্রীপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন ও মহানগরীর বাসন থানায় পুলিশের গুলিতে একজন ও কালিয়াকৈরে আনসার সদস্যদের গুলিতে দুজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার (৫ আগস্ট) এসব ঘটনায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
এ সময় শ্রীপুরে বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ বিভাগে বিজিবির সদস্যদের নিয়ে কয়েকটি বাস ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ঢাকায় যাচ্ছিল। বাসগুলো মহাসড়কের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় এলে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা আটকে দেয়। দুটি বাসে থাকা প্রায় ৮০ বিজিবি সদস্যকে মুলাইদ এলাকায় বাংলাদেশ ফিলিং স্টেশনের সামনে আটকে দেয় তারা। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা তাদের ভারতীয় পুলিশ বা বিএসএফ সদস্য বলে প্রচার করে। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যের কাছে থাকা অস্ত্রসহ গোলাবারুদ আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা বস্তায় ভরে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা বিজিবি সদস্যদের উপর চড়াও হয়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করে। দুপুর থেকে কয়েক ধাপে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা ছয়জন নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক গুলিবিদ্ধ হয়। অবরুদ্ধ থাকার খবর পেয়ে আশপাশের ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিজিবি সদস্যদের উদ্ধার করে। তারা আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিজিবি সদস্যদের উদ্ধারে বিকেলে কয়েকটি হেলিকপ্টার আকাশে চক্কর দেয়।
নিহতরা হলেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মৃত আসাদের ছেলে সিফাতউল্লাহ (২২), শ্রীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের দারগারচালা গ্রামের শুক্কুর আলমের ছেলে শরীফ আহমেদ (২০), ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার তাজুল ইসলামের ছেলে কাওসার (২৮), ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আব্দুল হাইয়ের ছেলে জুয়েল মৃধাসহ (৩০) অজ্ঞাতপরিচয় দুজন।
গুলিবিদ্ধরা হন আজাহার (৩০), ফারুক (২৬), মারুফ (১৯), ইদ্রিস (৩০), রিয়াজ (২৪), স্বপন (৩৫), বাবুল (২১), জাকির (৫২), শামীম (৩০), রায়হান (২৮) অজ্ঞাত নামা আর কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক।
মাওনা চৌরাস্তার আলহেরা মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, এ পর্যন্ত হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় পাঁচজনের মরদেহ এসেছে। তাদের মধ্যে তিনজনের নাম পরিচয় জানা গেছে। একজনের মরদেহ উপজেলার মাওনা এলাকায় তার আত্মীয় আরিফ সরকারের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ২২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আলহেরা হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল হোসেন বলেন, গতকাল দুপুরের পর থেকে গুলিবিদ্ধ ২২ জনসহ ৫০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জারিন ফারা বলেন, বিকেলের দিকে চারজন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসাকে ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে একজন (২৩) নিহত হন। তার পরিচয় জানা যায়নি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় মামলার চেষ্টা করলে পুলিশ জনতার উপর গুলি চালায়। এ সময় অজ্ঞাত পরিচয় একজন মারা যায়। পুলিশের গুলি শেষ হয়ে গেলে থানা থেকে সব পুলিশ পালিয়ে যায়। গুলিতে নিহত ব্যক্তির মরদেহ রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানার গেইটে পড়ে ছিল।
অপর দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে আন্দোলনকারীরা হামলা চালিয়ে দুটি ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় আনাসার সদস্যরা গুলি চালায়। এ সময় দুজন নিহত হন। আহত হয়েছে শতাধিক।
আহতদের সফিপুর মডার্ন হাসপাতাল, জেনারেল হাসাপাতাল, তানহা কেয়ার হাসপাতাল ও টাঙ্গাইলের কুমুদিনি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার রাখালিয়াচালা এলাকার বেলায়েত হোসেনের ছেলে এলিম হোসেন (৩০), অপর এক যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে গত রোববার দুপুরে হামলা চালালে আনসার সদস্যরা গুলি চালায়। এতে বেশ কিছু লোক আহত হয়। সেই ঘটনার জের ধরে সোমবার বিকেলে ফের আন্দোলনকারীরা আনসার ভিডিপি একাডেমিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা একাডেমির ভিতরে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। পরে তারা আনসার একাডেমির অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিংসংযোগ করতে গেলে তারা নির্বিচারে গুলি ছুড়ে। গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক। পরে আশপাশের লোকজন হতাহতদের উদ্ধার করে সফিপুর মডার্ণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আনসার সদস্যরা মাইক দিয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে ক্ষমা চেয়ে সবাইকে একাডেমির সামনে থেকে চলে যেতে অনুরোধ করেন।
সফিপুর মডার্ন হাসপাতালের চিকিৎসক সাদ্দাম হোসেন বলেন, হাসপাতালে দুজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। এ ছাড়া আরও দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের গাজীপুর শহীদ তাজউীদ্দন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।