কবরস্থান ডুবে যাওয়ায় লাশ দাফন নিয়ে বিপাকে ফেনীবাসী
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে ফেনীতে সৃষ্টি হয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। তবে জেলার বেশিরভাগ কবরস্থান বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লাশ দাফন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ফেনীর বানভাসিরা।
বন্যায় এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছেন বলে জানান জেলা প্রসাশক (ডিসি) মোছাম্মৎ শাহিনা আক্তার। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়, এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, বিভিন্ন কবরস্থান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লাশ দাফন করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা। লাশ দাফন করার জন্য মরদহে ভেলায় নিয়ে উঁচু জায়গা খুজছেন স্বজনরা। জানান, কোথাও মাটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার বাকী নেই। যারা মারা যাচ্ছেন তাদের দাফন করার জন্যও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফেনীর বানভাসিদের জন্য বিপুল পরিমাণ ত্রান সামগ্রী এসেছে ও মজুদ রয়েছে। তবে প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবীসহ যারা ত্রাণ বিতরণ করছেন তাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় অনেক এলাকার মানুষ ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন বানভাসিরা।
ফেনী জেলা প্রশাসন জানায়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার জন্য ফেনীর সোনাগাজীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে৷
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদরের বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও পানিবন্দি রয়েছে ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী , দাগনভূঞা উপজেলায় গ্রামের পর গ্রামের মানুষ। নিরাপদ পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে তাদের ভোগান্তি বেড়ে গেছে।
জেলায় প্রায় আট লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। উদ্ধার কাজে ও ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস সহ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী টিম কাজ করছে। স্বজনদের খোঁজে একদিক থেকে অন্য দিকে ছুটছেন মানুষ। অনেকের আকুতি বন্যা দুর্গত এলাকায় আটকা পড়া স্বজনদের খাবার পৌঁছে দিতে। স্বজনরা জানিয়েছেন অনেকে ৬/৭ দিন বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে আটকা পড়ে আছেন। খাদ্য না পেয়ে খুব কষ্টে আছেন তারা। বিশেষ করে শিশু খাদ্যের জন্য তাদের কষ্ট বেড়ে গেছে।
এদিকে জেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে পানিবাহিত রোগ। আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষের মধ্যে শিশু খাদ্য ও প্রাথমিক ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ও মেডিকেল ছাত্রদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল টিমসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ শাহিনা আক্তার গতকাল রোববার (২৫ আগস্ট) রাতে জানান, জেলার ছয় উপজেলায় আট লাখের বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা শহরে একটি এবং ছয় উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি সাতটি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক শাহিনা আক্তার।