আন্দোলনে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা মা
উপার্জনে অক্ষম বাবার দরিদ্র পরিবারের সন্তান জুবায়ের আহমেদ (১৬)। অভাবের সংসারে অল্প বয়সে পরিবারের হাল ধরতে হয় তাকে। বাবা-মা আর একমাত্র ছোট ভাইকে নিয়ে চলে আসে ঢাকায়। মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে কাজ নেন একটি ফার্নিচারের কারখানায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে জুবায়ের যোগ দেয় আন্দোলনে। জুবায়েরের মা এ কথা জানার পর তাকে নিষেধ করলেও মায়ের নিষেধ অমান্য করে গত ৪ আগস্ট ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয় সে। সেদিন ঢাকার শনির আখড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় জুবায়ের।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা হোসনেরা বেগম। বুকের ধনকে যারা এমন নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।
এদিকে জুবায়ের হত্যার বিচার দাবি করেছেন পরিবার ও প্রতিবেশীরা। ভৈরবের আগানগর ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রামের ছেলে জুবায়ের আহমদের নামে ভৈরব শহরের পাওয়ার হাউজ মোড়কে ‘শহীদ জুবায়ের চত্বর’ নামকরণের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভৈরবের আগানগর ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রামের বাসিন্দা হোসনেরা বেগম। বিয়ে হয় ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার সুলতানপুর এলাকায়। স্বামী ভিটেমাটিহীন হওয়ায় তিনি থাকেন বাবার বাড়িতে। তার দুই ছেলে জুবায়ের ও জুনায়েদ। দিনমজুর স্বামী প্রায়ই অসুস্থ থাকায় সংসারে শুধুই অভাব। দুই ছেলেকে নিয়ে তাই তার চরম অভাবে কাটে জীবন।
জুবায়ের পড়াশোনায় বেশ ভালো। কিন্তু সপ্তম শ্রেণির গন্ডি পার হওয়ার পরই রোজগারের আশায় শেখে কাঠমিস্ত্রির কাজ। গত ছয় মাস আগে মা-বাবা ও ছোট ভাইকে নিয়ে ঢাকার শনির আখড়ায় চলে আসে। সেখানে একটি ফার্নিচারের কারখানায় ১২ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করে।
ঢাকায় কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে জুবায়ের ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিতে থাকে। মা সেটি জেনে তাকে নিষেধ করেন। কিন্তু মায়ের নিষেধ সত্বেও গত ৪ আগস্ট সে আন্দোলনে যোগ দেয়। সেদিন দুপুরে বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে আবারও কাজে যাওয়ার কথা ছিল জুবায়েরের। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলেও খেতে আসেনি জুবায়ের। এতে মায়ের মনে দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধে। তিনি অস্থির চিত্তে ছেলের খোঁজ করতে থাকেন। শনির আখড়া এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ছেলের সন্ধান না পেয়ে এক প্রতিবেশী নারীকে সাথে নিয়ে যাত্রাবাড়িসহ আশেপাশের এলাকায় খোঁজ করেন। সেখানেও মিলে না ছেলের খোঁজ।
রাতে স্বামীকে নিয়ে ওইসব এলাকার হাসপাতালগুলিতে সন্ধান করেন। যদি ছেলে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে যেয়ে থাকে সেই আশায়। কিন্তু মেলে না খোঁজ। পরের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছেলের লাশ খুঁজে পান।
ছেলে হারা মা হোসনেরা হত্যাকারীদের বিচার চান। জানান, অভাবের সংসারে আলোর দিশা হয়ে তার পাশে দাঁড়ানো ছেলেকে হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা। তার দেহের একপাশ যেনো অবশ হয়ে গেছে। ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
জুবায়েরের নানা বাচ্চু মিয়া ও প্রতিবেশী আক্কাছ আলী পরিবারটির পাশে সরকার যেন দাঁড়ায় সেই দাবি করেন।