রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর দুর্নীতি বিষয়ে রুশ দূতাবাসের বিবৃতি
রাশিয়ার আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের (আরএনপিপি) ব্যয় সংক্রান্ত এক বিবৃতি দিয়েছে ঢাকার রুশ দূতাবাস। বিবৃতিতে রূপপুর এনপিপিতে ‘দুর্নীতি’ বিষয়ে প্রকাশিত খবরকে ইচ্ছাকৃতভাবে এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটিকে কলঙ্কিত করার এবং মস্কো ও ঢাকার মধ্যে স্থিতিশীল এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্ককে নষ্ট করার চেষ্টা বলে অভিযোগ করা হয়।
অ্যামবাসি অব দ্যা রাশিয়ান ফেডারেশন অব বাংলাদেশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আরএনপিপির দুর্নীতি বিষয়ে প্রচারিত সংবাদ ও তথ্যসমূহকে ‘বিভ্রান্তিকর’ ও ‘মিথ্যা’। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই বিষয়ে আরও অযৌক্তিক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাতে, রাশিয়ান রপ্তানি ক্রেডিট ব্যবহারের পদ্ধতি এবং রূপপুর এনপিপি নির্মাণে ইতোমধ্যে ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’
এতে বলা হয়, আরএনপিপিতে যেকোনো দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে না তার প্রমাণ হল, রাশিয়ান ফেডারেশনের আইন অনুযায়ী কোনো রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণ প্রদানে সার্বভৌম ঋণ গ্রহীতার কাছে সরাসরি টাকা স্থানান্তর করা হয় না। রপ্তানি চুক্তির অধীনে বিদেশি গ্রাহককে প্রদত্ত যেকোনো পণ্য, কাজ বা পরিষেবাগুলোর অর্থায়ন রাশিয়ান রুবেলে রুশ অর্থ মন্ত্রণালয় রুশ রপ্তানিকারক সংস্থাকে সরাসরি দেয়। রুশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রদত্ত নথি অনুযায়ী এই লেনদেনগুলো করা হয় এবং পূর্বে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর ওপর বিশেষায়িত বৈধ এজেন্ট ভিইবি-আরএফ দ্বারা সেই নথিগুলো অনুমোদিত হয়। রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণের ব্যবহৃত পরিমাণ রুশ ফেডারেশনের প্রতি বিদেশি রাষ্ট্র ঋণ গ্রহীতার ঋণ হিসাবে বিবেচিত হয়।
বিবৃতিতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে আর্থিক লেনদেন ও ব্যয়ের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া কর্তৃক প্রদত্ত মোট এক হাজার ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার পরিমাণের রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণ (স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট) থেকে মোট ৭৮০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যবহৃত হয়েছে। দুটি পৃথক চুক্তির অধীনে সর্বমোট এই পরিমাণ ঋণ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারিতে করা প্রথম চুক্তির অধীনে ব্যবহৃত ৪৯ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার (এই ঋণের মোট পরিমাণ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত) দেওয়া হয়। এই ঋণ ব্যবহারের মেয়াদ ২০১৭ সালেই শেষ হয়ে যায়।
২০১৬ সালের ২৬ জুলাই থেকে দ্বিতীয় চুক্তির অধীনে রপ্তানি ঋণের পূরো পরিমাণ হলেএক হাজার ১৩৮ কোটি মার্কিন ডলার। এই চুক্তির অধীনে এ পর্যন্ত ব্যবহৃত ৭৩৩ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার। এ থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে এবং এই ঋণ ব্যবহারের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট আরএনপিপির দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটম পরপর দুটি বিবৃতি দেয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত বিভিন্ন অসত্য তথ্য ও খবরের প্রচার দেখে রুশ দূতাবাস এ বিবৃতির মাধ্যমে পুনরায় তাদের অবস্থান পরিষ্কার করছে বলে উল্লেখ করে।