সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান গ্রেপ্তার
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহযোগিতায় আশুলিয়া থানা পুলিশের তদন্তকারী দল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ি থেকে তাকে আটক করে। পরে আশুলিয়া থানায় দায়ের করা একটি মামলার এজাহাভুক্ত আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাভারে গণহত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহিল কাফীর সঙ্গে সিন্ডিকেট করে পুলিশের পদোন্নতি, বদলি, টেন্ডার বানিজ্য থেকে শুরু করে পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে জ্যোতির বিরুদ্ধে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আশুলিয়ার বাইপাইলে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতিকে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির জানান, গত ৪ আগস্ট বিকেলে বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ৪র্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রবিউস সানী শিপু। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু তাহের মিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার (নং-২৬) ৪ নম্বর আসামি সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে আজ (শনিবার) দুপুরে আসামিকে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হবে।’
মামলার বাদী রবিউস সানী শিপু সাভারের আশুলিয়ার মধুপুর গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি ও ছাত্র নিপীড়নের বিরুদ্ধে সহযোগীদের নিয়ে তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। ৪ আগস্ট সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে আশুলিয়ার বাইপাইল দিকে যাবার সময় পুলিশ তাকে টার্গেট করে। বিকেল ৪টার দিকে বাইপাইলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের ওপর অতর্কিতে গুলি ছোড়ে। আন্দোলনের ফ্রন্ট লাইনে অবস্থান করার কারণে বাইপাইল জামে মসজিদের ছাদের ওপর থেকে তাকে লক্ষ্য করে স্নাইপার দিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী গুলি করে। এ সময় তিনি এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশ পায়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাকে হাবিব ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসা করতে অপরাগত জানানো হয়। পরে তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে ডাক্তার নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সাভার ল্যাবজোন হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও চিকিৎসা না পেলে তার মা নাদিয়া আফরোজ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। সেখান থেকে তাকে ঢাকার কেয়ার হাসপাতাল হয়ে ওই দিন রাত ১০টায় স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও চিকিৎসা না দিয়ে তাকে বাসায় চলে যাবার পরামর্শ দেওয়া হলে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুল্লাহের কাছে অভিযোগ করলে শুরু হয় চিকিৎসা। পরে অস্ত্রপচার করে চিকিৎসকরা পেট থেকে একটি ও উরু থেকে দুটি গুলি বের করেন।
পরে ২০ আগস্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আশুলিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলেও জানান রবিউস সানী শিপু।
মামলায় আসামি করা হয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, গ্রেপ্তারের পর বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সুপারনিউমারারি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহিল কাফী, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এফ এম সায়েদ, আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসান, সায়েদ, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বিশ্বজিৎ, গ্রেপ্তার ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজিব, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহম্মেদ সুমন ভূইয়া, তার ছেলে কাব্য ভুঁইয়া, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাদিম হোসেন, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শামীম হোসেন, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সাবেক সচিব ড. ফেরদৌস জামান, বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, পরিচালক ওমর ফারুক, জামিনুর রহমান, পরিচালক ফজলুর রহমান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের উপপরিচালক মো. গোলাম দস্তগীর, উপপরিচালক মৌলি আজাদ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী খান, অতিরিক্ত পরিচালক শাহীন সিরাজ, জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের সিনিয়র সহপরিচালক ফরিদুজ্জামান এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সিনিয়র সহপরিচালক শরিফুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরও ১০০ জনকে।
আসামিদের মধ্যে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলকারীদের হত্যা ও মরদেহ পোড়ানোর ঘটনার মামলায় ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা আরাফাত হোসেনকে গতকাল শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাকে এই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকালই ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগমের আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।