১০টি গ্রিডযুক্ত সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে দরপত্র আহ্বান করতে পারে বিপিডিবি
বেসরকারি খাতে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সরকারি সূত্রের মতে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন (বিশেষ) আইন, ২০১০-এর অধীনে আর কোনো চুক্তি সই না করার অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ফলে বেসরকারি খাতের গ্রিড-সংযুক্ত প্রস্তাবিত ৩৪টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) জারি করেছিল বিপিডিবি। দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি (বিশেষ) আইন, ২০১০ এর আওতায় ‘অপ্রত্যাশিত অফার’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপিডিবি এসব প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে।
এই আইনের আওতায় সরকার টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই যেকোনো বেসরকারি সংস্থাকে প্রকল্পের চুক্তি দিতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়মের মূল কারণ হিসেবে এই বিশেষ আইনের সমালোচনা করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
তাদের অভিযোগ, অনেক অযোগ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং খাতের বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
ফলে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেন। এরপরই সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি আইন (বিশেষ) আইন, ২০১০ এর অধীনে আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকারের অন্তর্বর্তী জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতের সব প্রকল্প উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
এই সিদ্ধান্তটি অবশ্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য, যারা ৩৪টি সৌর প্রকপ্লের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা বড় সমস্যায় ফেলেছিল, কারণ তারা এরই মধ্যে জমি সংগ্রহ করতে এবং এলওআই পেতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। এ অবস্থায় তারা প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব প্রকল্প পেতে এবং উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চুক্তি পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে স্থানভিত্তিক ৫০ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা ইতোমধ্যে জমি কিনেছেন তারা প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকল্পটি পেতে সহায়তা করবেন। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রচারের অংশ হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। বেসরকারি উদ্যোক্তরা নিজস্ব খরচে কেন্দ্রগুলো স্থাপন করবে এবং বিপিডিবি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনবে।’
বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ‘বিপিডিবি শিগগিরই প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বেশ কয়েকটি গ্রিড-ভিত্তিক সৌর প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করবে। বেশিরভাগই সেই জায়গাগুলো বেছে নেওয়া হবে যেখানে গ্রিড সাবস্টেশনগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সুবিধা পাওয়া যাবে।’ তবে অবস্থানের বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাননি তিনি।