আ.লীগের ‘মুজিববর্ষ’ বাস্তবায়নে ৪০০ কোটি টাকা! খতিয়ে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়
আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘মুজিববর্ষ’বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী’উদযাপনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার দুই দফায় এসব অর্থ বরাদ্দ দেয়।
তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ চাহিদার বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড় করা অর্থের পরিমাণ কত ও তাতে কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের ‘মুজিববর্ষ’কর্মসূচি
২০১৮ সালের ৬ জুলাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ পালনের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী, ‘মুজিববর্ষ’ ২০২০ সালের ১৭ই মার্চে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এ কর্মসূচি সফল করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি করা হয়। এর পাশাপাশি পৃথকভাবে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি’ করা হয়। এ কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব (পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’এবং হাতে হাত রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি গড়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ার আয়োজন, কনসার্ট, আতশবাজি- আনন্দ আয়োজন ও রক্তদান কর্মসূচি। ১৭ মার্চ মূল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বঙ্গবন্ধুর আমলের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বদের। তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের কেউই অংশ নেননি।
দলীয় কর্মসূচিতে ৪০০ কোটি টাকা
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সফল করতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এ অর্থ পর্যাপ্ত না হওয়ায় ওই অর্থবছর এবং পরের ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মোট ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে- এমন বিবেচনায় নতুন করে অর্থ বরাদ্দ চায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অর্থ চাওয়ার বিষয়টি ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অনুমোদন হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ওই সময়ে উপ-সচিবের দায়িত্বে থাকা মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাব অর্থ সচিবের কাছে পাঠানো হয়। এ প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী যথাযথভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকা এবং আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
‘জন্মবার্ষিকী’র ব্যয় খতিয়ে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়
আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী’অনুষ্ঠানের ব্যয় বরাদ্দ ও অর্থ ছাড়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে জানান, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বরাদ্দের বিপরীতে কত টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং সে অর্থ ব্যয়ের হিসেব বিবরণী খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সরকারের অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি দুর্নীতির আওতায় পড়ে বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে এ ধরনের কোনো অভিযোগ এলে কমিশন তার নিজস্ব আইন অনুযায়ী বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখতে পারে।
উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কারাগারে
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি বাস্তবায়নের প্রধান সমন্বয়ক’এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে গত ২ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী আত্মগোপনে ছিলেন। আটকের পর কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এখনও অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।