ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে আবার রাস্তায় নামতে হবে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনারা কি সত্যি সত্যি পরিবর্তন চান নাকি আবার ওই আওয়ামী লীগের নৌকাতে ফিরে যেতে চান—তাহলে ৫ আগস্ট আপনারা যেমন রাস্তায় নেমেছিলেন, আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য রাস্তায় নামতে হবে।’
আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে সদর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
জনসভায় বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশে এখন অনেক কিছু শুরু হয়েছে। কিছু কিছু মানুষ এখন বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। বিভিন্ন রকম কথা বলা বন্ধ করুন। বিশেষ করে দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে ভুল কথা বা উত্তেজনামূলক কথা বলে দেশের মানুষকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। আমরা শান্তিতে একটা নির্বাচন করতে চাই। যে ভোটের মাধ্যমে আমরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করতে চাই। তারা সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে, চুরিচামারি বন্ধ করবে, দুর্নীতি বন্ধ করবে, ঘুষ-গুন্ডাবাজি বন্ধ করবে, দখলদারি বন্ধ করবে।’
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সারা দেশে ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আওয়ামী লীগ। ৭০০ মানুষকে গুম করে দিয়েছে। তারা আয়নাঘর তৈরি করেছিল। আয়নাঘর কি জানেন? একটা ঘর তৈরি করেছিল, যেখানে মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করবে, অত্যাচার করবে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস একটা ঘরের মধ্যে বন্দী করে, চোখ বেঁধে রেখে দেবে। সেখানে তাকে বিভিন্ন কথা বলানোর চেষ্টা করবে। ১০ বছর, ১২ বছর একটা লোককে ওই ঘরে আটকে রাখত। এই কাজ করেছে আওয়ামী লীগ।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আজকে এমনি এমনি শেখ হাসিনা পালিয়ে যাননি। এত অন্যায় করছেন যে তাঁর পালানো ছাড়া কোনো পথ ছিল না। এ দেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছে, যখন বুক পেতে বুকে বুলেট নিয়েছে, তখন আর তাদের পালানো ছাড়া উপায় ছিল না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, বিএনপিতো পারেনি। বিএনপি ১৫ বছর লড়াই করেছিল বলেই তো তোমরা পেরেছ। তা না হলে এই জায়গাটা তো তৈরি হতো না। আমরা ১৫টি বছর অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। সেখানে তোমাদের শাবাশি দিই, বাহাবা দিই, কৃতজ্ঞতা জানাই যে তোমরা সাহস করে দাঁড়িয়ে গেছ। এ কারণেই শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।’
দলের সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে ‘ভিশন বাংলাদেশ টুয়েন্টি-থার্টি’ দিয়ে সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে ক্ষমতার ভারসাম্য হবে। আর আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব ২০২২ সালে ৩১ দফা দিয়েছেন। সেই ৩১ দফা কী, সংস্কার প্রস্তাব। এই সংস্কারটা আমরা চাই।’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জনসভায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইবোনেরা আছেন। আবার মুসলমান ভাইবোনেরা আছেন। আমাদের ধর্মীয় চর্চাটা ছাড়া আর কোনো পার্থক্য আছে? যখন পূজা হয়, তখন আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা দেখতে যান। আবার যখন ঈদ হয়, তখন হিন্দুরা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর কোনো দেশে নেই, ভারতেই নেই।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ প্রমুখ।