ঠান্ডাজনিত কারণে রামেকে বাড়ছে শিশু ও বৃদ্ধ রোগী
ঠান্ডাজনিত কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি জানুয়ারি মাসের ১ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৪৯৪ রোগী। তার মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে শয্যার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। শয্যা না পেয়ে অনেকে হাসপাতালের মেঝেতে চট কিংবা পাটি বিছিয়ে শুয়ে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সুমাইয়া-রকিবুল দম্পতির নয় মাস ২৮ দিনের একমাত্র ছেলে আদনানের ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। অবস্থার উন্নতি না হলে জানুয়ারির ৩ তারিখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। ছেলের অবস্থা আগের চেয়ে একটু উন্নতি হয়েছে জানিয়ে আদনানের বাবা রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট বাচ্চা, আমরা বুঝতে পারিনি ঠান্ডা লেগেছে। প্রথমদিকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছিল। গ্রামের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়েছিলাম, তার পরও ভালো হয়নি। পরে পাতলা পায়খানা থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়। অবস্থা ভালো না দেখে ছেলেকে নিয়ে মেডিকেলে আসি। চার দিন ধরে চিকিৎসা চলছে। আলহামদুল্লিাহ্ আমার ছেলে এখন একটু সুস্থ আছে।’
রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গড়ে শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১২০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এক হাজার ২০০ শয্যার বিপরীতে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে প্রায় তিন হাজার। এত সংখ্যক রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর এলাকার চার বছর বয়সী শিশু আতিকুল ইসলাম নিউমোনিয়া সমস্যায় ভর্তি আছে ওয়ার্ডে। বেডে জায়গা না পেয়ে মেঝেতে শুয়েই তার চিকিৎসা চলছে। আতিকুল ইসলামের মা সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘হামার ছেলির ঠান্ডা লেগি ঠান্ডা বসি গ্যাছ। জ্বর ভালো না হওয়ায় হামরা হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন শুনছি তার নাকি নিউমোনিয়া হয়ে গ্যাছ। এখন চিকিৎসা তো চলছে বাবা, আল্লার কাছে দোয়া করি যাতে দ্রুত ভালো হয়।’
রাজশাহী ও আশেপাশের এলাকায় মাঝারি ঘন কুয়াশা, রাতে ও সকালে কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জনজীবনে ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ছে। শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, চলতি শীতে ঠান্ডাজনিত কারণে রামেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। বেশিরভাগ রোগী কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।
ডা. শংকর আরও জানান, শীতে রোগীদের কথা বিবেচনা করে হাসপাতালে ওয়ার্ডগুলোতে বাইরের ঠান্ডা বাতাস প্রতিরোধের জন্য খোলা বারান্দায় পর্দা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নেবুলাইজারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে। শীতজনিত কারণে ভর্তি শিশুদের জন্য শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। তাঁরা শীতজনিত রোগে ভর্তি রোগীর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষায় কী করণীয়, জানতে চাইলে ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এই শীতে বাচ্চা ও বয়স্কদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে বের হলে নাক, কান ও গলার জন্যও শীত বস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। গরম খাবার খেতে হবে। গরম পানি খেতে হবে ও ব্যবহার করতে হবে। আগুন পোহানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শরীরে আগুন না লাগে। কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নিপাহ ভাইরাস থেকে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’