গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাংবাদিকদের মতামত ও সুপারিশ আগামী ৩১ জানুয়ারি মধ্যে সরকারের কাছে তুলে ধরবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের মামলা সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার, কিন্তু এখনও তা হয়নি। তাই দ্রুত এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এ সময় বিগত সরকার আমলে ক্ষতিগ্রস্ত মিডিয়াগুলোকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি আরও বলেন, গণমাধ্যমগুলো যাতে যথাযথভাবে তার ভূমিকা পালনে সক্ষম হয় তার উপযোগী নীতিমালা প্রণয়নে কমিশন সুপারিশ করবে। আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করে সাংবাদিকতার প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য হবে। সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাভাবিক বিকাশ হবে না। দেশে ব্যক্তি-ব্যবসায়িক স্বার্থে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর জন্য সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহারের প্রবণতা প্রবল। দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ন্যূনতম একটি বেতনের নিশ্চয়তা থাকা দরকার। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকবে না। ওয়েজবোর্ডের যে সুযোগ-সুবিধা তা ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা কার্যত প্রায় পান না। যারা পান তাঁরা সৌভাগ্যবান।

প্রধান অতিথি আরও বলেন, সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালায় সম্পাদকের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার বিষয়গুলোসহ অনেক ইতিবাচক বিষয়বস্তু রয়েছে। তবে যারা অতীতে সরকার পরিচালনা করেছেন তাঁরা নিজেরাই নীতিমালা অনুসরণ করেননি। যে কারণে এই সমস্যাগুলো হয়েছে। তারা তোষণকারীদের খুশি করার জন্য অনেক ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে পত্রিকার সার্কুলেশনের সংখ্যাবিষয়ক ডিএফপির মিডিয়া তালিকা তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে। গণমাধ্যমের মালিক, সম্পাদক, গণমাধ্যমকর্মী আমরা সবাই দুর্নীতি ও নিয়মভাঙার অন্যায়ের অংশীদার। সেই কারণেই আজকে এ রকম একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। টেলিভিশন-সংবাদপত্র মিডিয়ায় যাকে মফস্বলে রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাকেই আবার বিজ্ঞাপন সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রধান অতিথি আরও বলেন, বিগত ১৫ বছরে অনেক গণমাধ্যমকে অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে যারা চাকরিচ্যুত হয়ে বেকারত্বের শিকার হয়েছিলেন তাঁরা ক্ষতিপূরণের দাবিদার হওয়ার যোগ্য। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা জানান, গণমাধ্যমগুলোয় কর্মরত রাজধানীকেন্দ্রিক সাংবাদিক ও মফস্বল  এলাকার সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। সবার জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ দরকার। দলীয় প্রভাব বা রাজনৈতিক উদ্দেশে গণমাধ্যম অথবা এর কর্মীদের ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় কমিশনের সদস্য আখতার হোসেন খান, জিমি আমির, টিটু দত্ত গুপ্ত, আব্দুল্লাহ আল মামুন, বেগম কামরুন্নেসা হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময়সভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার প্রায় ১৫০ জন গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।