বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে মন্তব্য করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় ভারত। এ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ঢাকা।
এ প্রসঙ্গে রফিকুল আলম বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে অবস্থান করে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করছেন, যা বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে।
রফিকুল আলম আরও বলেন, এ বিষয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্য প্রদান অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী দেশটিতে নানা ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো বক্তব্য প্রদান করে না। অন্যদের কাছ থেকেও বাংলাদেশ একই ধরনের আচরণ আশা করে।’
এর আগে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করে ভারত। গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হামলা-ভাঙচুরের এই ঘটনার অবশ্যই নিন্দা জানানো উচিত।’
বিবৃতিতে জয়সওয়াল বলেন, ‘দখলদারত্ব ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবনটি ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ধ্বংস করা হয়, যা দুঃখজনক। বাঙালির পরিচয় গড়ে দেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্য যারা দেন এবং এ নিয়ে যারা গর্ববোধ করেন, তাদের প্রত্যেকেই এই বাসভবনের গুরুত্ব বোঝেন।’
এরপর এই হামলায় ঘটনা নিয়ে এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহির্প্রকাশ ঘটেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে, সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।’
দিল্লিতে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রমাগত মিথ্যা, বানোয়াট মন্তব্য ও বিবৃতি দেওয়ায় ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছে বাংলাদেশ।
গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তার হাতে একটি প্রতিবাদপত্র তুলে দেয়। ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলবের এক দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে দিল্লি।