ছয় মাস পর হাসানের মরদেহ পেয়ে মূর্ছা যাচ্ছেন মা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/15/bhola_hasan_5_august_1.jpg)
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত হন মো. হাসান (১৯)। ছয় মাস ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল তার মরদেহ। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হয় হাসানের।
আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে হাসানের নিজ বাড়িতে মরদেহ নেওয়া হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা, শোকে নিস্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা।
দীর্ঘদিন ধরে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন হাসানের মা গোলেনুর বেগম। তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। হাসান ফিরে এসেছে। তবে লাশ হয়ে। ছেলের মরদেহ দেখে ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। গোলেনুর বেগমের কান্না যেন থামছেই না।
এদিন দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় হাসানকে। এর আগে গতকাল শুক্রবার পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন এলাকায় নিহত হাসানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা পড়ে শহীদ হাসানের কফিন নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
নিহত হাসান রাজধানীর কাপ্তান বাজারে একটি দোকানে কাজ করত। গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন (গত ৫ আগস্ট) রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে প্রাণ হারান মো. হাসান। বিজয় মিছিলে অংশ নিতে হাসান বাসা থেকে বের হন। এরপর আর বাসায় ফিরেনি। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করলেও তার সন্ধান মেলেনি।
হাসানের বাবা মো. মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রায় সব হাসপাতাল, ক্লিনিক, কবরস্থান, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামসহ সবখানে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও তাকে পাইনি। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যাই। গায়ের কাপড় দেখে ছেলেকে শনাক্ত করি।’
মনির হোসেন আরও বলেন, ‘আমি চাই, আমার মতো কোনো বাবাকে যেন এভাবে তার সন্তান না হারাতে হয়। আমি সরকারের কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, হাসান তার বড় বোনের সঙ্গে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী সুতিখাল পাড় মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন। কাপ্তান বাজার এলাকার একটি ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর দোকানে কাজ করতেন। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিলেন হাসান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিশেষ সেলের সম্পাদক হাসান এনাম বলেন, আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর শহীদ হাসানের বাবা ক্রস-ম্যাচিংয়ের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) ডিএনএ নমুনা দিয়েছিলেন। এক মাস পর ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএনএ ক্রস-ম্যাচিংয়ের ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর হাসানের পরিবারকে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে এভাবে হত্যা করায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান হাসানের পরিবার ও এলাকাবাসী।