ভোট দিলে দেশে যে অশান্তি আছে তা থাকবে না : মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওরা অনেক সময় বলে যে আমরা ভোট ভোট করছি, কারণ একটাই যে ভোট না হলে আমার নেতা নির্বাচিত হবে কোথা থেকে। আমার কথাটা বলবে কে? সে জন্যই আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, নির্বাচন দিলে দেশটাতে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে সে অশান্তি হবে না, শান্তি আসবে, একটি স্থিতিশিল অবস্থা আসবে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেল ও সড়ক সেতুর মধ্যবর্তী স্থানে তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত জনতার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমরা চাই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিলাম, সেই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমরা ভোট দিয়ে আমাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই। যারা আমাদের কথা সংসদে বলবে, সব জায়গায় বলবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী একদিন ফারাক্কা বাঁধ করেছিলেন গঙ্গার পানি ন্যায্য হিস্যার জন্য। আর আজ আসাদুল হাবিব দুলু উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ডাক দিয়েছেন, জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই। এটা শুধু স্লোগান নয়, তিস্তা পাড়ের মানুষের বাঁচার জন্য যে আহাজারি তারই আওয়াজ আজকে বেড়িয়ে আসছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় এ সমাবেশে স্কাইপির মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাসসুজ্জামান দুদু বলেন, জেগে উঠতে হবে। শহীদ জিয়ার বাংলাকে যারা শ্মশান করতে চায়, বেগম জিয়ার বাংলাকে যারা শ্মশান করতে চায়, তারেক রহমানের বাংলাকে যারা শ্মশান করতে চায়, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নাই, হতে পারে না।
তিস্তা পাড়ের এ জনতার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
এ সময় আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তার কড়াল গ্রাসে ছিন্নমূল মানুষেরা কে কোথায় চলে গেছে আমরা জানি না। এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্ত বাংলাদেশ। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কথা বলার অধিকার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সাবেকমন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, রংপুর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক প্রমুখ।
দুই দিনের এই কর্মসূচি সফল করতে, জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় সমাবেশস্থল।
সকাল থেকে লাখো মানুষ বিভিন্ন যানবাহনযোগে ও পায়ে হেঁটে তিস্তা নদীর তীরে এসে একত্রিত হতে থাকে। দুদিনের এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের রাতযাপনের জন্য নদী তীরের বিভিন্ন স্থানে তাঁবু টানানো হয়েছে। এছাড়াও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য রাখা হয়েছে খাদ্যভাণ্ডার। উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার ১১ স্থানে দুই দিনের এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে মাইকিং, লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার, সভা সেমিনার সহ বিভিন্ন মাধ্যমে যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে তাতে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, শুধু বাংলাদেশ সরকার নয় গোটা বিশ্ব দেখবে এই তিস্তা নদীর জন্য কত পিছিয়ে রয়েছে এ জনপদ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের গজলডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ করে একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আর সে কারণে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদী তার স্রোতধারা হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়।