গণঅভ্যুত্থানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চাই

গত বছর স্বৈরশাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য গণআন্দোলনের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা।
আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলামের অভিযোগ, বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক শক্তিগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের আন্তরিকতা দেখায়নি।
এএফপিকে তিনি বলেন, ‘তরুণরা যে আদর্শের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, সেই সংস্কারের ব্যাপারে কেউ আগ্রহী নয়।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা বাস্তবায়নের দায় আমাদেরই নিতে হবে। সে কারণেই আমরা রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
শেখ হাসিনার পতনের পর, নাহিদ ইসলাম শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দেন। তবে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কারণে তিনি সেই প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেন।
আগামী মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মনে করা হচ্ছে এই নির্বাচনে দেশের অন্যতম পুরোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে নাহিদ মনে করেন, আগামী নির্বাচনে সরকার গঠন করতে না পারলেও এনসিপি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কেউ ভাবেনি গণঅভ্যুত্থান হবে, কিন্তু সেটি হয়েছে।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে আশা করি এবং বিশ্বাস করি, আমরা এবার জিতব। কিন্তু এই নির্বাচনই শেষ নয়... আমাদের লক্ষ্য হলো আরও ৫০, ১০০ বা তার বেশি বছর ধরে এই শক্তি ধরে রাখা।’
আগামী নির্বাচন আয়োজনের সময় নিয়ে এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপি চায়, যত দ্রুত সম্ভব নতুন সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন হোক।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন পেছানো নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন, কিন্তু সেটি সত্য নয়।’
তবে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, তাই নির্বাচনের আয়োজন ‘সম্ভব নয়’ ।’

এনসিপি সংবিধানের আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে একটি নাগরিক পরিষদ গঠনের জন্য গণভোটের আহ্বান জানিয়েছে, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে স্থায়ী ভিত্তি দেবে।
দলটি নিজেদের সবার জন্য উন্মুক্ত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চায়, যাতে গত বছরের আন্দোলনের চেতনা সামনে রাখা যায়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা অন্তর্ভুক্তির নীতিতে বিশ্বাসী, কিন্তু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের কিছু সীমারেখা রয়েছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এনসিপি নারীদের নেতৃত্বে এনেছে এবং সব জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করব যেন প্রতিটি নাগরিক তার অধিকার ভোগ করতে পারে।’