খুলনায় দুর্বৃত্তদের হাতুড়িপেটায় প্যানেল চেয়ারম্যান নিহত

খুলনার ফুলতলায় দুর্বৃত্তদের হামলায় ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগনেতা মো. ফারুক মোল্যা (৪৮) নিহত হয়েছেন। তিনি ফুলতলার পয়গ্রামের মৃত হাসান মোল্যার ছেলে।
নিহত ফারুক মোল্যার স্ত্রী মাফুজা বেগম (৪০) বলেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে ফুলতলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার মোবাইলফোনে পরিষদের বকেয়া সম্মানি প্রদানের কথা বলে ফারুক মোল্যাকে যেতে বলেন। ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক মোল্যা পরিষদে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাজ শেষে চেয়ারম্যান তাকে নিরাপদে মধ্যডাঙ্গা জুড়োকোর্টের রাস্তা দিয়ে চলে যেতে বলেন। ফারুক মোল্যা সে অনুযায়ী ওই পথ দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে মধ্যডাঙ্গা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের বাড়ির সামনে পৌছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা লোহার রড দিয়ে তার ঘাড়ে সজোরে আঘাত করলে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে হাতুড়ি, লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে হাত, পা, কোমর, বুক, মাথাসহ গোটা শরীরে উপর্যুপুরি আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করে। তার ডান হাত মটকে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বাম পায়ের রগ কেটে দেয়। যাওয়ার সময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করে সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
স্ত্রী মাহফুজা আরও বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারুককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, তার ভাইপো, সাবেক দুই ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় আরও ১০-১৫ জনের কথা উল্লেখ করেছে। তার অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ পৌছানোর পর তার মৃত্যু ঘটে।
বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পয়গ্রামস্থ তার বাসভবনে আনা হয়। বাদ আছর জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
ফুলতলা থানার ওসি (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ফারুকের কোমর থেকে এক রাউন্ড গুলিসহ একটি ভাঙাচোরা রিভলবার উদ্ধার করা হয়। ফারুক মোল্যার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ ১৬টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া দুটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলায় আদালত তাকে ৭৪ বছরের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। যদিও উচ্চআদালত থেকে তিনি জামিনে রয়েছেন।
অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার মোবাইলফোনে ফারুক মোল্যাকে ডেকে আনার কথা অস্বীকার করে বলেন, বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদে একটা মিটিংয়ে তার সাথে সাক্ষাত হয়। পরে ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদে ভাতা ও ভিজিএফয়ের চাল প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে তিনি চলে যান। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১২টা) ফুলতলা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। তবে পুলিশ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।