ইসির আশুবাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ এখন সরকারের হাতে

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আশুবাস্তবায়নযোগ্য আইন-বিধি সংশ্লিষ্ট ৯টি সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যা বুধবারই পাঠানো হয়েছে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে।
গত মার্চের মাঝামাঝি পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্য থেকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো’ ‘অতি জরুরি ভিত্তিতে’ নির্ধারিত ছকে প্রস্তাব পাঠাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুরোধ করেছিল ইসিকে।
আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চতুর্থ কমিশন সভা হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এটা চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইনশাআল্লাহ, আজকের মধ্যে পাঠিয়ে দেব।’
আশুবাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার সুপারিশে তিন ধরনের ক্যাটাগরি রয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এসব সুপারিশগুলো আগে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিন দিন ধরে কাজ করা হয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এখানে তিন ধরনের ক্যাটাগরি ছিল। একটা হচ্ছে আশু বাস্তবায়নযোগ্য। এটাতে হয়তো রাজনৈতিক বিতর্কের কিছু নেই, আলোচনা বা সহমত পোষণের কিছু নেই। সেগুলো আমরা (অনুমোদন) দিয়ে দিয়েছি।
‘যেগুলো মনে হয়েছে পলিটিক্যাল ঐক্যমতের বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করিনি। আর যেসব সুপারিশের বিষয়ে আমরা মতামত পূর্বে দিয়েছি, সেগুলোর বিষয়ে বলেছি এটার ব্যাপারে আগে মতামত দিয়েছি। আমরা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম।’
রাজনৈতিক দলগুলো যে বিষয়গুলোতে একমত হবে সেগুলো নিয়ে কমিশনের কোনো দ্বিমত নেই বলে মন্তব্য করেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ । তিনি বলেন, এখানে স্পেসেফিক বলা হয়েছে- যে বিষয়গুলো মন্ত্রণালয় তালিকাভূক্ত করে আমাদের পাঠিয়েছে। এরমধ্যে কিছু আছে নির্বাচন কমিশন নিজেই বাস্তবায়ন করবে। বিধি সংশ্লিষ্ট যেগুলো, তা নিয়ে অবজারভেশন দেওয়ার কিছু নেই, আইন ঠিক হলে বিধি করা যাবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশের সাথে ভিন্নমত ছিল ইসির। ১৮ মার্চ সংস্কার কমিশনের এসব সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে ঐকমত্য কমিশনে চিঠি পাঠানো হয়। পরে সরকারের তরফ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে বুধবার রাজনৈতিক ঐকমত্য, আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে ভোটের আগে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আইন সংশোধন করা সম্ভব এমন বিষয়গুলো তুলে ধরেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘মোটাদাগে বলা যায়- যেসব বিষয়গুলোতে শুধুমাত্র আরপিও এর সামান্য সংশোধন করে করা সম্ভব এবং আর্থিক সংশ্লেষ নেই (সেগুলো সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে)।...কিছু বিষয় রয়েছে রাজনৈতিক; রাজনৈতিক ঐক্যমত হলে আশুবাস্তবায়নযোগ্য। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয় রয়েছে সেগুলোতে আমরা মতামত দেয়নি। নির্বাচনি আইন সংস্কার প্রস্তাবে যেগুলো সরাসরি ইসি সম্পৃক্ত ও আর্থিক সংশ্লেষ নেই-এমন ১০টির মতো সুপারিশ রয়েছে।’
যেসব সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য সম্পৃক্ত, সেগুলো এড়িয়ে গেছে কমিশন। এ প্রসঙ্গে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, যেগুলো মনে হয়ে পলিটিক্যাল ঐক্যমতের বিষয় আছে সেগুলো নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করিনি। আর যেসব সুপারিশের বিষয়ে আমরা মতামত পূর্বে দিয়েছি, সেগুলোর বিষয়ে বলেছি এটার ব্যাপারে আগে মতামত দিয়েছি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো সুপারিশের মধ্যে যেসব বিষয়ে ইসির কাছে প্রস্তাব চেয়েছিল, তা চূড়ান্ত করে ইসিও পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে।
আশু বাস্তাবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে ইসি, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ৯টি বিষয় রয়েছে। এগুলো হল- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সংশোধন), নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (সংশোধন), নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা (স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক) পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিক নীতিমালা (সংশোধন), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ (অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী), পোস্টাল ব্যালট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন এবং রাজনৈতিক ও নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা এসব খুঁটিনাটি সব বিষয় দেখে প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘সুপারিশগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে দেখেছি। একটা একটা শব্দ দেখেছি, আশুবাস্তবায়নযোগ্য বলা হচ্ছে কথাটা। আবার এখানে এমন কোনো উপাদান আছে কিনা, আর্থিক সংশ্লেষ, আইনি ব্যাপার রয়েছে ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয় রয়েছে।’
আশুবাস্তবায়নযোগ্য কী কী প্রস্তাব থাকছে
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে ইতোমধ্যে নির্বাচনি আইনে সংস্কারে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় নতুন দফা, হলফনামায় ভুল তথ্য দেওয়া, রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনি অপরাধের মামলা, মনোনয়নপত্র জমার সময় নির্ধারণ, প্রচারের সময় নির্ধারণ, দল নিবন্ধন বিধিসহ ছোটখাটো সংযোজনের প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে ইসিরি সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, স্পেসেফিক করে সব বলা সম্ভব নয়। ব্যালট পেপারে জলছাপের কথা (সুপারিশ), এর সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। তাই এটা আমরা আশু বাস্তবায়নযোগ্য মনে করি না। ”
সচিব বলেন, যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রয়োজন এবং আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এই বিষয়গুলো বাদে অন্যগুলো নিয়ে আমরা সুপারিশ করেছি। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে।