পরকীয়ার জেরে পুলিশ স্বামীকে হত্যা, স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৬

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পরকীয়ার জেরে পুলিশ সদস্য স্বামী মো. হুমায়ুন কবিরকে (৪৪) হত্যার ঘটনায় স্ত্রীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
গতকাল বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিনগত রাতে ঢাকা ও বরিশালে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী মোসা. সালমা বেগম (৩২), মোছা. মরিয়ম বেগম ওরফে মলি (৩৮), ফজলে রাব্বি ওরফে শুভ (২৩), পলি বেগম (৩৫), মো. কায়েচ হাওলাদার (৩৪) এবং একজন কিশোর।
তালেবুর রহমান জানান, গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে সংবাদ পেয়ে দয়াগঞ্জ বটতলা জজ মিয়ার বাড়ির ভাড়া বাসার গেটের কাছে থেকে পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরের মরদেহ উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মৃত পুলিশ সদস্যের ভাই খোকন হাওলাদার বাদী হয়ে গত (২৯ এপ্রিল) যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হুমায়ুন কবির ডিএমপির পরিবহণ বিভাগে জলকামান ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী সালমা বেগম, ছেলে কাওসার হোসেন ইমন (১৩) এবং মেয়ে তুবা (৭) নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করতেন।
তালেবুর রহমান আরও জানান,মো. রাজিব হোসেন নামে এক আত্মীয়ের সঙ্গে সালমা বেগমের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল, যা হুমায়ুন কবির জানতে পারেন। এ নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল একটি পারিবারিক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর সালমা বেগম ও তার ভাই মো. মানিকের সঙ্গে হুমায়ুন কবিরের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে নিহত হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী সালমা বেগম ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক রাজিব হোসেন ও ওই ভবনের চারতলায় থাকা তার আত্মীয় মরিয়মসহ আরও কয়েকজন মিলে হুমায়ুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
তালেবুর রহমান আরও জানান, মামলাটি তদন্তকালে ভিকটিমের দুই সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহারনামীয় আসামি নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী সালমা বেগম ও মো. মরিয়ম বেগম ওরফে মলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে আজ (১ মে) ভোর বরিশাল জেলা থেকে শুভ, রাফি, পলি ও কায়েসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় নিহত হুমায়ুনের দুটি মোবাইল ফোনও শুভর কাছ থেকে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত ও গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সালমা বেগমের সঙ্গে তার আত্মীয় মো. রাজিব হোসেনের সঙ্গে এক বছর ধরে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। গত রোববার (২৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে হুমায়ুন ডিউটি শেষে বাসায় ফিরে আসেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার স্ত্রী সালমা ফার্মেসি থেকে কিনে আনা ঘুমের ওষুধ খাবারের সাথে মিশিয়ে তাকে খাওয়ান। এতে হুমায়ুন অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর ভিকটিমের হাত-পা গামছা দিয়ে বেঁধে এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে রাত আড়াইটার দিকে তাকে তারা হত্যা করে। হত্যার পর মরদেহ অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে হত্যাকারীরা ভোর ৪টার দিকে বাড়ির গেটের পাশে ফেলে রাখেন।
সালমা বেগম ও মরিয়মকে বুধবার বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অপর গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। পলাতক রাজিবসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।