৪৪ বছরে ঢাকায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বেড়েছে ৭ গুণ

চরম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। গত ৪৪ বছরে এই শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা প্রায় সাতগুণ বেড়ে গেছে। একই সময়ে ঢাকা তার ৬০ শতাংশ জলাধার হারিয়েছে। এর ফলে শহরের তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মানুষের জীবনকে খুব কঠিন করে তুলেছে।
আজ রোববার (২৭ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’। তারা ‘প্রকৃতিবিহীন ঢাকা? প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক টেকসই নগর ভাবনার পুনর্বিচার’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার কিছু এলাকা ভয়াবহ গরমের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শ্যামপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা ও দারুসসালাম এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এসব এলাকায় তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে। ঢাকার মোট ৫০টি থানার মধ্যে ৩৭টিই এখন নিরাপদ নির্মাণসীমা ছাড়িয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য খুবই খারাপ খবর।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ঢাকার এই চরম অবস্থা থেকে বাঁচাতে হলে প্রকৃতির অধিকারকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। দ্রুত প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে হবে। তাদের মতে, ঢাকায় প্রতিটি মানুষের জন্য অন্তত ৯ বর্গমিটার গাছপালা ও ৪ দশমিক ৫ বর্গমিটার জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে শহরের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১ দশমিক শূন্য ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানো সম্ভব।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, গত ৪৪ বছরের (১৯৮০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত) স্যাটেলাইটের ছবি এবং শহরের তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। এতে ঢাকার পরিবেশের যে ক্ষতি স্পষ্ট। মূলত, নিয়ন্ত্রণহীন নগরায়ন এবং অব্যবস্থাপনা এই সংকটের প্রধান কারণ। এটি কেবল নগর পরিকল্পনার ভুল নয়, এটি পরিবেশের প্রতি এক ধরনের অবিচার এবং মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, যা ভবিষ্যতের প্রজন্মকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
সংস্থাটি মনে করে, ঢাকার টেকসই ভবিষ্যতের জন্য এখন শহরের উন্নয়ন নয়, বরং প্রকৃতির অধিকার নিশ্চিত করাই সবচেয়ে জরুরি।